পুলিশকে 'না'

পুলিশ সদস্যদের কার্যালয়ে যেতে না করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে লেখা এক চিঠিতে ওই কর্মকর্তা লিখেছেন, কারণে-অকারণে পুলিশ সদস্যরা তাঁর কার্যালয়ে যাতায়াত করে পরিবেশ নষ্ট করছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আয়েশা খানম গত ২৯ আগস্ট পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠিটি পাঠান। এর একদিন আগে তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক মীর আবুল কালাম আজাদ ও সহকারী উপপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, ওই দুই পুলিশ সদস্য তাঁদের ক্যাশ অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মূলত স্বাক্ষর জালের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা চিঠিটি দিলেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, এর আগেও পুলিশ সদস্যরা স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলে নিয়েছেন কি না? আজ বুধবার অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোনালী ব্যাংককে তাঁরা চিঠি দিয়েছেন। আগেও এভাবে টাকা তোলা হয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে তাঁদের।

আইজিপিকে লেখা চিঠিতে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা লেখেন, বিভিন্ন দপ্তরের ক্যাশ সরকার ও হিসাবরক্ষকরা চিঠিপত্র, বিল ও চেক আনা-নেওয়ার জন্য হিসাবরক্ষণ অফিসে আসেন। কিন্তু আইজিপির আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের পুলিশ সদস্যরা কারণে-অকারণে নিজ দপ্তরের অনুমতি ছাড়া তাঁর কার্যালয়ে যাতায়াত করছেন। এতে কার্যালয়ের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দুই পুলিশ সদস্য যে স্বাক্ষর জাল করে টাকা তোলার চেষ্টা করেছেন তা প্রমাণিত। আইজিপির কার্যালয়সহ তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তরের কোনো পুলিশ সদস্য যেন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে না আসেন, সেই বিষয়ে নির্দেশনা জারির অনুরোধ করেছেন ওই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সহকারী মহাপরিদর্শক (ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সমেন্ট) আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, বিধি অনুসারে চিঠিপত্র, বিল ও চেক জমা দেওয়ার জন্য পুলিশের প্রতিটি দপ্তরের আলাদা ক্যাশ সরকার আছেন। তাঁদের নামও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টা এমন না যে পুলিশ আজ একজনকে, কাল আরেকজনকে ওই কার্যালয়ে পাঠাচ্ছে। কাজেই কার হাতে চেক দেওয়া হচ্ছে, সেটাও দেখা দরকার। দুই পক্ষেই সতর্কতা প্রয়োজন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার চিঠি এখনো তাঁর হাতে পৌঁছায়নি। চিঠিটি হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, তাঁদের কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে পুলিশ ওই চেক হাতে পেল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক মীর আবুল কালাম আজাদ ও উপসহকারী পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোনালী ব্যাংকের কাকরাইল শাখায় ৩৫ লাখ টাকার একটি চেক জমা দেন। চার দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা টেলিফোন করেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. শফিকুল ইসলামকে। তিনি বলেন চেকের ওই স্বাক্ষরের সঙ্গে নমুনা স্বাক্ষরের মিল নেই। শফিকুল ওই কর্মকর্তাকে চেকটি ছাড় না করার অনুরোধ করেন। পরে তাঁরা জালিয়াতি ও স্বাক্ষরের বিষয়ে নিশ্চিত হন। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অভিযুক্ত দুজনকে ২৮ জুলাই থানায় সোপর্দ করা হয়।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য কারাগারে আছেন। এটাই তাঁদের প্রথম জালিয়াতি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে পারছেন না।