আওয়ামী লীগ কখনো ধর্মের বিভাজনে বিশ্বাস করে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বক্তব্য দেন। ছবি: বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বক্তব্য দেন। ছবি: বাসস

দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কখনোই ধর্মের বিভাজনে বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা যেন নিজেরাই নিজেদের অবহেলিত মনে না করেন, সে ব্যাপারে আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই এতে বিশ্বাস করে না। বরং তারা মনে করে, এই দেশ সকলের, এ দেশে বসবাসকারী সকল ধর্মাবলম্বীর।’

জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন উপলক্ষে গণভবনে দেশের সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলার মাটিতে আমরা ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সকলে এক হয়ে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কাজেই এখানে সকল ধর্মের সম্মান ও অধিকার থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন সকলে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে, এক ভাইয়ের সঙ্গে অপর ভাইয়ের রক্ত মাটিতে মিশে গেছে, সে রক্ত তো কেউ ভাগ করতে যায়নি। এটা ভাগ হতে পারে না। ভারতীয় শরণার্থীশিবিরে আশ্রিতদের কে হিন্দু বা কে মুসলমান, সেটাও দেখা হয়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সংবিধান আমাদের দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে তিনি কিন্তু সে কথাই বলে রেখেছিলেন। আমাদের যে চার মূলনীতি, সেই মূলনীতিতে কিন্তু এ কথাটাই ছিল।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজেরা নিজেদের বারবার কেন সংখ্যালঘু বলেন, আমি জানি না। আপনারা কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক না? আপনারা কি এ দেশের মানুষ না? এটা আপনার জন্মভূমি না? এটাই আপনাদের জন্মভূমি। তাহলে কেন নিজেরা নিজেদের ছোট করে দেখবেন?’

বাংলাদেশে সবার সমান অধিকার আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা সকল পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থটাই হচ্ছে যার যার ধর্ম সে স্বাধীনভাবে পালন করবে। আজকে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” অথবা “ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” বলে যে স্লোগান দিচ্ছি, সেটি কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি। কারণ, প্রতিটি অনুষ্ঠানই ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সকলেই কিন্তু উদ্‌যাপন করছে।’

শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে সরকারের পাশাপাশি পূজা-পার্বণে নিজস্ব ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা সব সময় কঠোর রাখারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দা মহারাজ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ দে, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দে, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের সাবে সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।