অবশেষে ফিরে এলেন সেই মেয়েটির মা

মেয়ের খোঁজে পাবনার শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে মা রওশন আরা।  প্রথম আলো
মেয়ের খোঁজে পাবনার শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে মা রওশন আরা। প্রথম আলো

পাবনা জেলা শহরের হিমাইতপুরে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রর সৎসঙ্গ আশ্রমে রেখে যাওয়া সেই মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েটির মা ফিরে এসেছেন। মেয়েটিকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির জন্য জরুরি কিছু কাগজপত্র আনতে তিনি চট্টগ্রামে যান। গতকাল বুধবার তিনি ফিরে এসে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে গিয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ কারণে তাঁর ফিরতে অনেক দেরি হয়েছে। 

গতকাল সকালে আশ্রমে ফিরে আসেন ওই নারী। কিন্তু এর আগেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেয়েটিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তাঁকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহী সেফ হোমে পাঠানো হয়। ফলে গতকাল বিকেল পর্যন্ত তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। 

আশ্রমে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর নাম রওশন আরা বেগম। বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব সাতবাড়িয়া গ্রামে। প্রায় ১৪ বছর আগে পাঁচ সন্তানসহ তাঁকে রেখে তাঁর স্বামী চলে যান। এরপর সন্তানদের নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকেন তিনি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে তাঁর সংসার চলে। মানসিক প্রতিবন্ধী এই মেয়েটির নাম লুবনা আক্তার (১৮)। পাঁচ সন্তানের মধ্যে লুবনা সবার বড়। প্রায় সাত বছর আগে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারান। এরপর থেকে তিনি বিভিন্নভাবে মেয়ের চিকিৎসার চেষ্টা করেছেন। কয়েক মাস আগে তিনি মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাঁকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ১২ জুন তিনি মেয়েকে নিয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির জন্য নাগরিক সনদসহ কিছু জরুরি কাগজপত্র চাওয়া হয়। পরে তিনি মেয়েকে ওই আশ্রমে রেখে কাগজপত্র আনতে চট্টগ্রাম যান। 

চট্টগ্রামে গিয়ে তিনি নিজেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় ২৬ দিন তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁকে প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত মেয়েটির ভিডিও দেখান। চিকিৎসক ও নার্সরাই কিছু টাকা দিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করেন। এরপর তিনি মেয়ের খোঁজে আবার পাবনা আসেন। 

এদিকে মেয়েটির মায়ের পাবনায় আসার খবর পেয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা তাঁকে মেয়ের খোঁজখবর দেন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা পল্লব ইবনে শায়েখ বলেন, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর আশ্রম থেকে মেয়েটিকে আদালতের মাধ্যমে রাজশাহী সেফ হোমে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে তাঁকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া করা হচ্ছিল। যেহেতু মেয়েটির মা ফিরে এসেছেন, এখন মায়ের মাধ্যমেই তাঁকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। 

মেয়েটি ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। ১২ জুন মানসিক প্রতিবন্ধী এই মেয়েটিকে তাঁর মা আশ্রমে নিয়ে আসেন। পরে মেয়ের কিছু কাগজপত্র আনার কথা বলে আশ্রম থেকে বের হয়ে যান। পরপর চার দিন আশ্রমে থাকার পরও মা ফিরে না আসায় ১৬ জুন আশ্রম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়ে পাবনা সদর থানায় একট জিডি করে।