সন্ধ্যা নামলেই ময়মনসিংহ শহরে ছিনতাই-আতঙ্ক

ছিনতাই
ছিনতাই

কয়েক দিন আগে মুক্তাদির আহমেদ নামের এক ব্যক্তি ইজিবাইকে করে ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনারপার হতে চরপাড়া যাচ্ছিলেন। সে সময় যাত্রীবেশে তিনজন ছিনতাইকারী তাঁর সঙ্গে উঠে কিছু দূর যেতেই ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁর সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে দ্রুত নেমে পালিয়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি।

রিপন দত্ত নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, মাস দুয়েক আগে তিনি রাতের বেলায় রিকশা করে নতুন বাজার হতে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন ঢাকার উদ্দেশে। এ সময় রিকশাটি চামড়াগুদাম এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তাঁর রিকশার গতিরোধ করে ছুরি ধরে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

আবুল কালাম নামের আরেকজনের ভাষ্য, তিনি গত মাসে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে গরুর খোঁয়াড় এলাকায় মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক এসে তাঁর রিকশার সামনে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগে তারা গলায় ছুরি ধরে তাঁর সঙ্গে থাকা মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

এভাবে ময়মনসিংহ শহর সন্ধ্যার পরপরই যেন চোর-ছিনতাইকারীদের দখলে চলে যায়। শহরের বেশ কটি স্থান এতটাই ভয়াবহ যে সাধারণ মানুষ সেই এলাকাগুলো দিয়ে সন্ধ্যার পর চলতেই ভয় পান। টাকাপয়সার সঙ্গে মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়ানো ছাড়াও ছিনতাইকারীদের হাতে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। মাঝেমধ্যেই ঘটে এসব অপরাধ।

পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, রেলস্টেশন, গাঙ্গিনারপার, চরপাড়া, গরুর খোঁয়াড়, সেহড়া, কৃষ্টপুর, মাসকান্দা, সানকিপাড়া, বলাশপুর এলাকাগুলোতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেশি বলে জানিয়েছেন নগরবাসী। তাঁদের অনেকের অভিযোগ, এ বিষয়ে বারবার পুলিশকে জানালেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। টহল পুলিশ আসতে দেখে ছিনতাইকারীরা সটকে পড়ে, কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পরপরই আবার শুরু হয় তাদের দৌরাত্ম্য।

নগরবাসীর ভাষ্য, পাটগুদাম ব্রিজ মোড় ও রেলস্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি। পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ের বাসস্ট্যান্ড হতে কয়েকটি জেলার বাস ও অটোরিকশা চলাচল করায় লোকসমাগম বেশি থাকে। কোনো যাত্রী বাস বা অটোরিকশা থেকে নামার পরপরই ভিড়ের মধ্যেই সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা দল বেঁধে কৌশলে যাত্রীদের পাশে হাঁটতে হাঁটতে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে সন্ধ্যার পর ঢাকাগামী সবশেষ ট্রেন অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস পৌঁছামাত্র ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। একই সময়ে তিনটি ট্রেন স্টেশনে পাশাপাশি দাঁড়ানো থাকায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চুরি বা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। অগ্নিবীণার সঙ্গে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ও দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনটিতে প্রচুর ভিড় থাকে। ফলে হরহামেশাই চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

শহরের এমন পরিস্থিতিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, এ ধরনের অপকর্ম বন্ধে পুলিশ প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকেও অতিরিক্ত সড়কবাতি সংযোজন করতে হবে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি আবদুল কাদের চৌধুরী টহল পুলিশের তৎপরতা জোরদার করাসহ কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানান।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমীন বলেন, চুরি, ছিনতাই কমানোর জন্য পুলিশ বাহিনী সার্বক্ষণিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও অল্প কিছু ঘটনা ঘটছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা অন্য জায়গায়। কেউ চুরি বা ছিনতাইয়ের স্বীকার হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন না। ফলে অপরাধীদের শনাক্ত করা বা তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তাই এ ধরনের অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যায়।’