আবাসিকে নতুন গ্যাস-সংযোগ দিতে সুপারিশ

শহরাঞ্চলে গ্যাসের নতুন আবাসিক সংযোগ চালু করার সুপারিশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গঠিত কমিটি। বিদেশ থেকে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাইপলাইনের মাধ্যমে আবাসিকে সরবরাহ করার কথা বলেছে এই কমিটি। তারা বলেছে, এ ক্ষেত্রে এলএনজির দাম তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) চেয়ে কম পড়বে।

গত ১৮ মার্চ কমিটির সুপারিশ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। তবে গত পাঁচ মাসেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আবাসিকে গ্যাস–সংযোগ ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। এটি এখনো আলাপ–আলোচনার পর্যায়ে আছে।’

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ‘আবাসিক জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ও এলএনজির তুলনামূলক মূল্য পর্যালোচনা’ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের শহরাঞ্চলে এলপিজি ব্যবহার বাদ দিয়ে নতুন পাইপলাইন নির্মাণ করে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে। এলপিজির চেয়ে এলএনজির দামও কম। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যমান পাইপলাইনে আবাসিকে নতুন গ্যাস–সংযোগ ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে বলে বৈঠকে সুপারিশ আসে। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কামরুজ্জামানকে সদস্যসচিব করে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। 

কমিটির সদস্য ও জ্বালানি খাতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মিজানুর রহমান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছি।’

দেশে চাহিদার তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কম থাকার কারণ দেখিয়ে সরকার ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে শিল্প ও বাণিজ্যিকে নতুন গ্যাস–সংযোগ বন্ধ করে। এরপর একই কারণে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিকেও নতুন গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করা হয়। ২০১৩ সালের ৭ মে আবাসিকে সংযোগ দেওয়া শুরু হলেও কিছুদিন পর তা বন্ধ করা হয়। 

সারা দেশে ছয়টি সরকারি কোম্পানি গ্যাস বিতরণ করে থাকে। এগুলো হলো তিতাস, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল, জালালাবাদ, বাখরাবাদ ও সুন্দরবন। সারা দেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন ৩৮ লাখ। তাঁদের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে মোট ২৭ লাখ গ্রাহকের কাছে গ্যাস সরবরাহ করছে তিতাস গ্যাস। 

গ্যাস–সংযোগ বন্ধ থাকার পরও গত কয়েক বছরে দেশের বিতরণ সংস্থাগুলো ১ লাখ ৮ হাজার ৫৯৮ জন গ্রাহকের আবেদন জমা নিয়েছে। এর মধ্যে তিতাস এলাকাতেই ৮০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। আবেদন বাবদ কোম্পানিগুলোর কোষাগারে জমা পড়েছে ৮৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এলএনজির চেয়ে এলপিজির দাম বেশি উল্লেখ করে কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির দাম (আমদানি ব্যয়, জাহাজ ভাড়া থেকে শুরু করে সরকারের সব সারচার্জসহ) ৩৫ টাকা ৪০ পয়সা। আর এলপিজি গ্যাসের প্রতি ঘনমিটার বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা। আর বর্তমানে যেসব বাসাবাড়ি প্রিপেইড মিটার দিয়ে গ্যাস ব্যবহার করে, সেখানে প্রতি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস দাম পড়ে ১২ টাকা ৬০ পয়সা।

প্রতিবেদনে আবাসিকে প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে নতুন গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে কমিটি বলেছে, সে ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে আমদানি করা এলএনজির সমান করা যেতে পারে। এরপরও এলপিজির চেয়ে কম থাকবে এলএনজির দাম। প্রতিবেদনে বাসাবাড়িতে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বিপজ্জনক বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। 

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। উল্টো পাইপলাইনে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার। এত অবিচারের পরও যদি সরকার আবাসিকে নতুন গ্যাস–সংযোগ দেয়, তাহলে জনগণ উপকৃত হবে।