সাংসদ ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সালিসি মামলা

থিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে সালিসি (আরবিট্রেশন) মামলা হয়েছে। মামলার আদেশে কোম্পানির মালিকানাধীন সম্পত্তি রাজশাহীর ‘থিম ওমর প্লাজা’র বিষয়ে আদালত কেন অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন না, সে বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন।

থিম রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকা জেলা জজ আদালতে মামলাটি করেছেন। মামলার আরজিতে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে কয়েক কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া, প্রতারণা ও প্রভাব খাটিয়ে থিম ওমর প্লাজা দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় মোস্তাফিজুর রহমান কোম্পানির অন্য দুই অংশীদারকেও বিবাদী করেছেন। তবে মূল অভিযোগ তোলা হয়েছে সাংসদ ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার কাছে কোনো কাগজ আসেনি। এ বিষয়ে জানতে আমাকে এক সাংবাদিক ফোন করেছিলেন। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।’ তিনি আরও বলেন, সম্পত্তি নিয়ে অংশীদারদের মধ্যে বিরোধ হতেই পারে। তার নিষ্পত্তিরও বিধান আছে। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওমর ফারুক চৌধুরী থিম রিয়েল এস্টেটের ৩৫ শতাংশের মালিক। আর মোস্তাফিজুর রহমান মালিক ২৫ শতাংশের। এ ছাড়া আরও দুজন পরিচালকের মালিকানা রয়েছে ২০ শতাংশ করে। থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে। এরপর ভবনের ফ্ল্যাট ও দোকানপাট বিক্রি করে। রাজশাহীতেও তারা ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছে। ভবনটি রাজশাহীর বোয়ালিয়া মৌজায় নিউমার্কেটের উত্তর পাশে। প্রায় ৩০ কাঠা এই জমির মালিক ওমর ফারুক চৌধুরী। নিজের জমিতে বহুতল ভবন গড়ে তুলতে থিম রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। অথচ জমিটি তিনি আগেই একটি বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধক রেখেছিলেন। ফারুক চৌধুরী থিমের সঙ্গে চুক্তি করার সময় বিষয়টি গোপন রেখে প্রতারণা করেছেন বলে মামলার আরজিতে বলা হয়েছে। আর এ কারণে কোম্পানি এখন আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরজিতে আরও অভিযোগ করা হয়, মোস্তাফিজুর রহমান বাধ্য হয়ে ওমর ফারুক চৌধুরীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় পরে গত ২ জুলাই মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে সালিসি মামলা করেন। ২২ জুলাই এর শুনানি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট থিম ওমর প্লাজার ফ্ল্যাট ও দোকানপাট বিক্রির ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা কেন জারি করা হবে না, জানতে চেয়ে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যথাসময়ে ভবনটি নির্মাণ করেছেন। এতে কোম্পানির প্রায় ৩১ কোটি টাকা দেনাও হয়েছে। ভবনটির ফ্ল্যাট ও দোকান বিক্রি করে এই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানির চেয়ারম্যান সাংসদ ওমর ফারুক কয়েক মাস আগে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডেকে বলেছেন, এই ভবন এখন তাঁর, এতে এমডির কোনো অংশ নেই। তাঁকে ভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

আরজিতে আরও বলা হয়েছে, ওমর ফারুক চৌধুরী থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা নিজের হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।