চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার 'যৌক্তিকতা' জানালেন কাদের

জি এম কাদের। ফাইল ছবি
জি এম কাদের। ফাইল ছবি

রওশন এরশাদকে দলের পাল্টা চেয়ারম্যান করে সংবাদ সম্মেলন করার পরই আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার বিষয়ে ‘যুক্তি’ তুলে ধরলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, গঠনতন্ত্র ও প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সাংগঠনিক নির্দেশেই তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা যাঁরা ভঙ্গ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও পাল্টাপাল্টি চেয়ারম্যান ঘোষণার বৃত্তে এখন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দুপুরে গুলশানে রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলনের পর বনানীতে দলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২০১৬ সালের সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ২২ নম্বর ধারা উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান পার্লামেন্টারি পার্টির আস্থাভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত হবেন। পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা যিনি হবেন, তিনিই আমাদের বিরোধীদলীয় নেতা হবেন, এটাই স্বাভাবিক। এখানে পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো মিটিং (সভা) করার বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। চেয়ারম্যান যাঁকে আস্থাভাজন বলে মনে করবেন, তিনিই হবেন। আমি আমার প্রতি আস্থা কাদের আছে, তা জানার জন্য সাংসদদের সঙ্গে কথা বলেছি। ১৫ জন আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। আমি শুধু অনুভব করিনি। আমি হাতে পেয়েছি যে ১৫ জন আমার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে আমরা বিরোধীদলীয় নেতা দেখতে চাই। তখনই আমি এই পত্রটি স্পিকারের কাছে পাঠিয়েছি। এটা গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়েছে। সেখানে কোথাও পার্লামেন্টারি পার্টির সভা করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়নি।’

জি এম কাদের বলেন, আগেও এইচ এম এরশাদ এ পদ্ধতিতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা, বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচিত করে গেছেন। কোনো বিষয়েই পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হওয়া প্রশ্নে কাদের বলেন, গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারায় বলা আছে, চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যেকোনো পদে যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, অপসারণ বা যেকোনো ব্যক্তিকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করতে পারবেন।

কাদের বলেন, ‘এরশাদ একটি সাংগঠনিক নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি বলে গেছেন, “আমার অবর্তমানে আমার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।” তিনি অসুস্থ থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশ দেন। ওনার মৃত্যুর পূর্বে তিনি এ দায়িত্ব দেন। তাঁর মৃত্যুর পর কী হবে, সে হিসেবে আমাকে তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন।’
চেয়ারম্যান পদ নিয়ে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে সেই বিষয়ে কাদের গঠনতন্ত্রের ৩৮ ধারা তুলে ধরেন, যেখানে কোনো সিদ্ধান্তের অস্পষ্টতা থাকলে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানান কাদের। তিনি বলেন, এরশাদের মৃত্যুর পর প্রেসিডিয়ামের তিনটি সভা হয়। প্রথম সভায় তাঁকে সর্বসম্মতভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে অভিনন্দন জানানো হয় বলে জানান কাদের। সর্বশেষ ১৭ আগস্ট তাঁকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় বলেও জানান কাদের।

রওশন প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘রওশন এরশাদ আমার মায়ের মতো। তিনি নিজ মুখে তো আর বলেন নাই যে তিনি চেয়ারম্যান। তাঁকে সম্মান করি। আশা করি, তিনি এমন কিছু করবেন না, যাতে তাঁর সম্মান নষ্ট হয়।’ দল ভাঙনের মুখে পড়েনি দাবি করে কাদের বলেন, ‘যেকোনো লোক যেকোনো জায়গায় বলে দিল, তিনি রাজা। রাজার তো রাজত্ব থাকতে হবে, প্রজা থাকতে হবে।’ এ ছাড়া জানান, যাঁরা শৃঙ্খলা নষ্ট করেছেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় পার্টিতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদেরর দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো। দলীয় পদ নিয়ে উভয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। রওশন ও কাদেরকে সামনে রেখে দলীয় নেতাদের ভিন্ন দুটো বলয় তৈরি হয়েছে। এত দিন সৃষ্টি হওয়া নানা দ্বন্দ্ব মধ্যস্থতার ফলে মিটেও গেছে। এবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার প্রশ্নে ভাবি-দেবরের দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে রূপ নিল। এরশাদের মৃত্যুর পর এবারের দ্বন্দ্ব বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে।

দ্বন্দ্বের শুরু গত মঙ্গলবার। ওই দিন রাতে নিজেকে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেন জি এম কাদের। এর এক দিন পর গতকাল বুধবার স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। তাতে জি এম কাদেরের চিঠি গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল বিরোধী দলের উপনেতা রওশন এরশাদের তরফ থেকে স্পিকার শিরীন শারমিন বরাবর ওই চিঠি দেওয়া হয়। গতকাল দলীয় সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, ‘দলীয় সাংসদদের কোনো সভা না করেই বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন করা হয়েছে, আমি নিজেই জানি না। রওশন এরশাদও জানেন না।’

গতকালই রওশন এরশাদের অনুসারীরা আজ সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সেই অনুযায়ী আজ সংবাদ সম্মেলন করে রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি গঠনতন্ত্রের ধারা তুলে ধরে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে বলা আছে, যদি চেয়ারম্যানের মৃত্যু হয়, তাহলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ১ নম্বর, চেয়ারম্যান ২ নম্বর। এখানে রওশন এরশাদ সিনিয়র। এটা ২০ এর উপধারা ২(ক)-এ আছে। সুতরাং আজকে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করছি, রওশন এরশাদ দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।’