ফেরিঘাটে তিতাসের মৃত্যু: তদন্তে তিনজন দায়ী, যুগ্ম সচিবের দোষ পায়নি কমিটি

তিতাস ঘোষ
তিতাস ঘোষ

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে দেরিতে ফেরি ছাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে দায়ী করেছে ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমটি। তবে দেরিতে ফেরি ছাড়ায় যুগ্ম সচিবের দোষ পায়নি কমিটি। ওই ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদনটি পৌঁছায়। প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। তিনি বলেন, অবকাশ শেষে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে ফেরি বিলম্বে ছাড়ায় তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যুগ্ম সচিব সবুর মণ্ডল জানতেন না যে মুমূর্ষু রোগী অ্যাম্বুলেন্সে অপেক্ষা করছে, ওই তিনজন তাঁকে এ বিষয়ে জানাননি। সবুর মণ্ডলকে অভিযুক্ত করার যুক্তিসংগত কারণ নেই বলে প্রতিবেদনে এসেছে।

ফেরি বিলম্বে ছাড়ায় অভিযুক্ত তিনজন হলেন ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন, প্রান্তিক সহকারী খোকন মিয়া ও উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলম। প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি বসে থাকায় আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে থাকা তিতাসের মৃত্যু হয় গত ২৫ জুলাই। তিতাসের স্বজনদের অভিযোগ, ভিআইপি আসার অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ঘাটেই বসে ছিল ফেরিটি। সেদিন সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। এরপর তিতাসের মৃত্যুতে তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটসের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হতে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনের ভাষ্য, ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন, প্রান্তিক সহকারী খোকন মিয়া ও উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলম লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীর অ্যাম্বুলেন্স পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে জানা সত্ত্বেও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারে সহায়তা না করে ‘কুমিল্লা ফেরি’ নির্ধারিত সময়ের অনুমিত দুই ঘণ্টা পর ছেড়েছে। প্রতিবেদনে কয়েক দফা সুপারিশ রয়েছে। ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া ও পৌঁছানোর সময় মাস্টারকে অবশ্যই স্থায়ী লগ বুক বা রেজিস্টারে সময় লিখে সই করতে হবে। ফেরি ঘাটে ভিড়িয়ে কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী ভিআইপি সুবিধা চেয়ে কেউ ফেরি পার হতে চাইলে তাঁকে অবশ্যই তাঁর সরকারি ভ্রমণবিবরণী আগে থেকে ফেরি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে আগে যোগাযোগ সাপেক্ষে ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ম শিথিল করা যেতে পারে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে ফেরিঘাটে পারাপারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।