ভুয়া বিসিএস কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সম্পর্ক গড়ে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবক রিমান্ডে

মিথ্যা পরিচয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে ওয়ালীদ হোসেন (৩১) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৪ (র‍্যাব)। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত এই আসামিকে এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।

এ ঘটনায় ওই যুবকের বিরুদ্ধে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। মামলায় ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, আসামি ওয়ালীদ হোসেন গোপনে ধারণ করা তাঁর ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছেন।

পুলিশ ও মামলার কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, চার বছর আগে বরিশালে কোচিং করার সময় এই নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় ওয়ালীদ হোসেনের। এরপর দুজনের মধ্যে তৈরি হয় ঘনিষ্ঠতা। পরে মেয়েটি ঢাকায় চলে আসেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে যোগাযোগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। পরে ওয়ালীদ মেয়েটির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। মেয়েটির কাছে দাবি করেন যে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন, সহকারী কমিশনার (এসি) হিসেবে কর্মরত আছেন। এরপর তাঁদের মধ্যে আবার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই নারীর অজান্তেই ওয়ালীদ তাঁদের কিছু ঘনিষ্ঠ ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। সেগুলো নিজের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করেছিলেন ওয়ালীদ।

ভুক্তভোগী নারী মামলায় বলেছেন, প্রেমের সম্পর্ক চলার একপর্যায়ে ওই নারী জানতে পারেন যে ওয়ালীদ হোসেন বিসিএস ক্যাডার নন। তাঁকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। এরপর পারিবারিকভাবে অন্য একজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের কথা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হন ওয়ালীদ। প্রেমের সম্পর্ক চলার সময় গোপনে ধারণ করা ওই ছবিগুলো আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠানোর হুমকি দিয়ে ওয়ালীদ ওই নারীকে দেখা করতে বলেন। গত ৩ আগস্ট ওই নারী ওয়ালীদের বাসায় গেলে তাঁকে ধর্ষণ করেন তিনি। পরে হুমকি দেন, ওই নারী যদি ওয়ালীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখেন, তাহলে গোপনে ধারণ করা ছবিগুলো তাঁর স্বামী ও আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। পরে ওই নারী যোগাযোগ না রাখায় ওয়ালীদ গোপন ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন। ওই নারী তা জানতে পারেন ২৪ আগস্ট। ৩ সেপ্টেম্বর ওই নারী র‍্যাবে অভিযোগ করেন।

এই অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে ওয়ালীদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। আসামি ওয়ালীদের বাসা থেকে একটা ল্যাপটপ ও মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে।

মিরপুর থানার পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, আসামি ওয়ালীদ হোসেন এর আগে এই নারীর মতো আরও অনেক নারীকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। গোপনে ওই সব নারীর ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, আসামি ওয়ালীদ হোসেন একটা কলেজে শিক্ষকতা করেন। নিজেকে ভুয়া বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন, যা গোপনে মুঠোফোনে ধারণ করেন। ওই নারীর বিয়ের খবর পাওয়ার পর গোপনে ধারণ করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন আসামি। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।