শৈশবের গল্প শুনে শিক্ষকেরা আপ্লুত

গাজীপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সুধী সমাবেশ। গতকাল বিকেলে।  ছবি: প্রথম আলো
গাজীপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সুধী সমাবেশ। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো

‘স্যার আমায় ঘুম পাড়াতেন, গাছের নিচে পড়াতেন, জীবন পাল্টে দেওয়ার দিকনির্দেশনা দিতেন। প্রিয় স্যারের কারণে আজ আমিও শিক্ষক।’ শৈশবের সেই প্রিয় শিক্ষক শফিউদ্দিন স্যারকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের শিক্ষক আবুল হোসেন। একপর্যায়ে শিক্ষকের পা ছুঁয়ে সালাম করলেন। তখন হলজুড়ে মুহুর্মুহু করতালি। উপস্থিত সবাইকে ছুঁয়ে যায় ছাত্র-শিক্ষকের ভালোবাসা।

আবুল হোসেন বলেন, ‘বাবা-মায়ের পরেই তিনি আমার প্রিয়। ঠিক বাবার মতোই তিনি আমাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেন, চৈত্রের গরমে গাছের নিচে মাদুর বিছিয়ে পড়াতেন।’ একই মঞ্চে শিক্ষক শফিউদ্দিন বলেন, ‘প্রিয় সেই ছাত্রকে কাছে পেয়ে আমিও আপ্লুত।’ 

গতকাল শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা-২০১৯’ উপলক্ষে সুধী সমাবেশ হয়। এতে উপস্থিত আমন্ত্রিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। নিজের শৈশবের শিক্ষকদের কথা স্মরণ করতে গিয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

শৈশবে শিক্ষকদের শাসন-আদর অনেকের জীবন পাল্টে দেওয়ার গল্পের জন্ম দিয়েছে। শৈশবের ‘কঠিন স্যার’ চরিত্র এখন আলোকিত জীবন রচনা করতে সহায়তা করেছে। এমন জীবন পাল্টে দেওয়া স্মৃতি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিক্ষকেরা।

হাতিমারা স্কুলের শিক্ষক লিজা খন্দকার বলেন, ‘পড়াশোনা করা অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো। ঠিক তখন গফুর স্যার আমার পাশে দাঁড়ালেন। তিনি উৎসাহ দিলেন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। আমি সন্তান সামলে পড়াশোনা করলাম। শেষ পর্যন্ত শিক্ষক হলাম।’

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অসীম বিভাকর বলেন, ‘আমাদের স্যাররা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে আমরা সামনে পড়তাম না। খুব সম্মান করতাম। শৈশবের শিক্ষকদের সম্মান জানানোর এমন আয়োজনের জন্য প্রথম আলো ও আইপিডিসিকে অভিনন্দন। আমরা চাই, এই আয়োজনে যোগ্য শিক্ষকেরা সম্মানিত হোন।’

ভাষাশহীদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক বলেন, ‘শৈশবের স্যারদের কথা খুব মনে পড়ে। কত আদর করে পড়াতেন। ভয়ও পেতাম। শৈশবের দুরন্তপনার কারণে শিক্ষকের মার কম খাইনি। আজ সেই স্যারদের অনুপ্রেরণায় আমিও একজন শিক্ষক।’

নির্ধারিত নিয়মে মনোনয়ন শেষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৫ জন করে ১০ জন শিক্ষককে দেওয়া হবে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’। এর অংশ হিসেবে গতকাল আইপিডিসি ও প্রথম আলোর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগামী ৪ অক্টোবর নির্বাচিত প্রিয় শিক্ষকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য দেন বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা। এরপর প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গড়া পদ্মাপারের আলোর পাঠশালা নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন প্রথম আলো গাজীপুর বন্ধুসভার সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইপিডিসির গাজীপুর জেলা শাখার ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষক লায়লা ফারজানা, পরিবেশবিদ আমিনুল ইসলাম, শিক্ষক আজমির হোসেন, বসন্ত চন্দ্র দাস প্রমুখ। এরপর আইপিডিসির ‘উচ্ছ্বাস’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র এবং শিক্ষক সম্মাননা নিয়ে আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।