কালকিনির 'সুনীল মেলায়' হাজারও মানুষ

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণে মাদারীপুরের কালকিনিতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের ‘সুনীল মেলা’। ছবি: অজয় কুন্ডু
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণে মাদারীপুরের কালকিনিতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের ‘সুনীল মেলা’। ছবি: অজয় কুন্ডু

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৮৫তম জন্মজয়ন্তী আজ শনিবার। লেখকের স্মরণে মাদারীপুরের কালকিনিতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের ‘সুনীল মেলা’। এবার মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে দুই বাংলার প্রকাশকেরা এই মেলায় অংশগহণ করেছেন।

কালকিনি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৮ সাল থেকে লেখকের পৈতৃক ভিটা কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রথমবার স্বল্প পরিসরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর এ মেলা রূপ নিয়েছে বৃহৎ আকারে। বসেছে ৬০টি স্টল। পাশাপাশি আলোকসজ্জা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকায় বেড়েছে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি।

কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে আজ বেলা ১১টায় সুনীল মেলার উদ্বোধন করেন মাদারীপুর-৩ আসনের সাংসদ আবদুস সোবহান মিয়া। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।

মেলায় আয়োজকেরা জানান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান। লেখকের সাহিত্য চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতেই সুনীল মেলার আয়োজন। মেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুনীলের কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া পাহাড়ি নৃত্য, লালন-পল্লিগীতি, একক ও দলীয় নৃত্যের প্রতিযোগিতাও রয়েছে। মেলায় ৬০টি স্টল রাখা হয়েছে। তবে প্যান্ডেলে জায়গা হয়েছে ৪৪টি স্টলের। এর মধ্যে ৩০টি স্টল বইয়ের প্রকাশনীদের জন্য রাখা হয়েছে। বাকি স্টলগুলোতে বসেছে মনিহারি দোকান। মেলার পাঁচ দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলার প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত থাকবে। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত চলবে এ মেলা।

সুনীল মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। ছবি: অজয় কুন্ডু
সুনীল মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। ছবি: অজয় কুন্ডু

আজ গিয়ে দেখা যায়, সুনীল মেলায় ঢুকতেই চোখ পড়বে সাজানো–গোছানো বিশাল একটি ফটক। এখান থেকে ১০০ মিটার এগোলেই একটি খোলা জায়গায় সারি সারি দোকান। এখানে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের উপন্যাস, গল্পসহ নানা রকমের বই। এসব কিনছেন বইপ্রেমীরা। তৈরি করা হয়েছে একটি মঞ্চ। মঞ্চে শিক্ষার্থীদের গান-নাচ ও আবৃত্তি মঞ্চস্থ হচ্ছে। সুনীলের পৈতৃক ভিটায় একটি প্রাচীন বাড়িও রয়েছে। সেখানে সুনীলের ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জামদি দেখতেও ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

সুনীল মেলায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকাশনা অধিদপ্তর পরিচালক নেসার উদ্দীন আয়ূব। তিনি বলেন, ‘প্রখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি মাদারীপুরে এসে আমরা গর্বিত। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে এই মেলাসহ নানা আয়োজন এখানে করা হবে। আমাদের যেমন একুশে বইমেলা জাতীয়ভাবে সারা দেশের জন্য হয় জাতীয় পর্যায়, তেমনি একসময় এই সুনীল মেলাটি হবে দক্ষিণ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দীর্ঘতম বইমেলা।’
অন্যধারা প্রকাশনীর প্রকাশক ও লেখক শাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো সুনীল মেলায় এসেছি। তাঁকে মনেপ্রাণে স্মরণ করেছি। ভবিষ্যতে এই আয়োজন অব্যাহত থাকলে আমরা বারবারই আসব।’
মেলায় অংশ নেওয়া কলেজশিক্ষার্থী মো. সুজন বলেন, ‘আমরা বইতে সুনীলের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। তাই আজ তাঁর স্মৃতিচারণা করতে বন্ধুরা মিলে তাঁর পৈতৃক নিবাসে এসেছি। এখানে এসে কিছু বই কিনলাম। চারপাশ ঘুরে দেখলাম। গ্রামের পরিবেশে এমন আয়োজন সত্যি খুব ভালো লাগার একটি বিষয়।’
কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সুনীল মেলাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে আমরা ভারত থেকে দুটি প্রকাশনীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। দুই বাংলার বই এই মেলায় পাওয়া যাবে। পাশাপাশি মেলায় সবার কাছে ব্যতিক্রমীভাবে তুলে ধরতে পাঁচ দিনব্যাপী নানা আয়োজন থাকবে।’