কাকে খেলা শেখাবেন, আমরা ছোটবেলার খেলোয়াড়

শামীম ওসমান। ফাইল ছবি
শামীম ওসমান। ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে খেলবেন না। কাকে খেলা শেখাবেন। আমরা তো অনেক ছোটবেলার খেলোয়াড়।’ তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন নিয়ে এখানে কেউ কেউ খেলা খেলার চেষ্টার করেন। কেউ কেউ নিজেকে জনগণের চেয়ে ক্ষমতাবান মনে করেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে এক সমাবেশে শামীম ওসমান এ কথা বলেন। ‘রুখে দাঁড়াও স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে’ স্লোগানে শহরের নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

শামীম ওসমান বলেন, ‘পুলিশ-পুলিশ খেলা আমরা ছোটবেলা থেইকা খেলি। আমরা পাঁচ ভাইবোন। তিন ভাই যখন জন্ম নিছি, তখন আমার বাপ ছিল জেলে। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে জন্ম নিছে তখন ও ছিল কাদেরিয়া বাহিনীতে। আমার ছেলে জন্ম নিছে, আমি তখন জেলে। এখন আমার ছেলের বাচ্চা হবে সামনে, সেটা নিয়ে আমার বউ খুব চিন্তিত, এখন কী হবে? বহুত টেনশনে আছে।’ তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে অতি উৎসাহী কিছু অফিসার আছে, তারা সংখ্যায় কম। হয় তারা নিজেরাই শিবির করত, না হয় তাদের বাবা-দাদারা শিবির করত।

বিভিন্ন কারণে কয়েক মাস ধরে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে শামীম ওসমানের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ১৯ এপ্রিল তাঁর অনুগত কাউন্সিলর আবদুল করিম ওরফে ডিশ বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে আবদুল করিমকে ছাড়াতে ব্যর্থ হন শামীম ওসমান। এর আগে ওসমান পরিবারের অনুগত আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। এরপর বিভিন্ন সময় পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে শামীম ওসমান বক্তব্য দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার এক জরুরি কর্মিসভা করেন এবং বিনা কারণে নেতা-কর্মীদের গায়ে হাত দিলে চুপ থাকবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ওই সভা থেকে ৭ সেপ্টেম্বর সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এর পরদিন শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের স্ত্রীর বড় ভাই মিনহাজ উদ্দিনকে দ্রুত বিচার আইনে করা মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরদিনই জামিন পান মিনহাজ। এরপর গত বৃহস্পতিবার চাঁদাবাজির মামলায় সাংসদ শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হয়। তাঁকে না পেলেও দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

>

মামলায় অনুসারীদের আসামি করা নিয়ে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সরকারি দলের এই সাংসদ।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকালের সমাবেশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনা ছিল। শহরে কোনো গণপরিবহন ছিল না। বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে এসে সমাবেশে যোগ দেন।

সমাবেশে শামীম ওসমান নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চান, ‘যদি এই মুহূর্তে একটা কর্মসূচি দিই, পুরো নারায়ণগঞ্জ বন্ধ হবে, তাহলে কি বন্ধ হবে? ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক বন্ধ হবে?’ তখন নেতা-কর্মীরা হাত তুলে সমর্থন জানান।

সরকারদলীয় এই সাংসদ বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ হলো নারায়ণগঞ্জের গোপালগঞ্জ। তারপরও কিছু কিছু পুলিশ অফিসার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ নিয়ে খেইলেন না। আওয়ামী লীগ নিয়ে খেললে তা হবে আগুন নিয়ে খেলা।

শামীম ওসমান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে একজন প্রতিবন্ধী ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের ৭০ শতাংশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। ৩০ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বড় ব্যবসায়ী। এই মামলা নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। বাদীর স্বাক্ষর জাল করে ৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের এসপিকে ডেকেছিলাম। এসপি সমস্ত ঘটনা শুনে আমাকে বলেছেন, লিডার, এই মামলায় নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি থাকবেই না। আমি এসপির কথায় বিশ্বাস করতে চাই।’

মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি চন্দন শীলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন বেগম, মহানগরের নেতা শাহ্ নিজাম, জাকিরুল আলম, যুবলীগের শাহাদাত হোসেন ভূইয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

তবে সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, মিজানুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে দেখা যায়নি।