শরতে জলাশয়ে তিন রঙের পদ্ম

শরতে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। বিলে আসন পেতেছে গোলাপি, হলুদ ও সাদা রঙের পদ্ম। গতকাল সকালে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
শরতে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। বিলে আসন পেতেছে গোলাপি, হলুদ ও সাদা রঙের পদ্ম। গতকাল সকালে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

শরতে জলাশয়ে ভাসছে পদ্ম ফুল। তা দেখে শিশুরা মোহিত। মন ভালো হয়ে যাচ্ছে বড়দেরও। প্রকৃতি মাঝেমধ্যে তার ভালোবাসা এভাবেই বিলিয়ে দেয়। এখন দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ের আশপাশে সেই ভালোবাসারই চাষবাস।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ে সৌন্দর্য ছড়িয়েছে তিন রঙের পদ্ম ফুল। গোলাপি, সাদা আর হলুদ পদ্ম দখিনা বাতাসে দোল খাচ্ছে। পদ্ম ফুলের ওপর ওড়াউড়ি করছে নানা প্রজাতির প্রাণী। ওদের কিচিরমিচির আওয়াজে মুগ্ধ আশপাশের শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধরা।

বেলা বাড়ে। শিশুরা ঘুম থেকে ওঠে। তাদেরই কেউ কেউ পৌঁছে যায় জলাশয়ে। তারপর নৌকায় করে পৌঁছে যায় জলাশয়ের মাঝ–বরাবর। তুলে নেয় পদ্ম। শুধু কি পদ্ম তোলে, তাদের কারও কারও মাথায় থাকে অন্য চিন্তা। জলাশয় থেকে মাছও ধরে। প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে ভ্রমণপিপাসুরা সেখানে গিয়ে প্রাণের আনন্দে উপভোগ করছে পদ্ম ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শরৎ আসে, প্রকৃতিগতভাবেই ফুটে ওঠে এই ফুল।

পদ্ম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera। গোত্রের নাম নিমফেসি।

পদ্ম ফুল নিয়ে যে প্রশ্ন জাগে মনে, তার উত্তর খুঁজতে যোগাযোগ করি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসিল আরেফিন ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, পদ্ম ফুলের আদিনিবাস দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। এই ফুল ফোটে রাতে। ভোর ও সকালের পর রৌদ্র প্রখর হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত প্রস্ফুটিত থাকে। বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। শরতে অধিক পরিমাণে ফোটে। হেমন্ত পর্যন্ত ফুটতেই থাকে। এই ফুল মানবদেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে বেশ উপকারী।

শনিবার সকালে কুমিল্লার চানপুর-বাগড়া সড়কের পাশে দক্ষিণগ্রাম এলাকার গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তীর্ণ জলাশয়ে হাজার হাজার পদ্ম। প্রকৃতির আপন খেয়ালে ওই জলাশয়ে এই ফুলের জন্ম। এবার বেশি ফুল ফুটেছে। জলাশয়ে পানি বেশি থাকার কারণে এখানে ধানসহ অন্যান্য শস্যের চাষ হচ্ছে না। ফলে আপন শক্তিতে পদ্মরা বেড়ে উঠেছে। সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে উদার হাতে।

স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন লিটন বলেন, ‘এই জলাশয়ে অনেক আগ থেকেই পদ্ম ফুল ফোটে। গত দুই বছরের মধ্যে এবার বেশি ফুল ফুটেছে। ওদের কেউ বিরক্ত না করার কারণে বংশবিস্তার ঘটেছে বেশি। যখনই সেখানে যাই, প্রাণ জুড়ে যায়।’

জলাশয়ের পাশে বাড়ি রিয়াদ হোসেন ও আহাদ হোসেন নামের দুই শিশুর। তারা বলে, রাতে পাখি এসে পদ্ম ফুলের ওপর ওড়াউড়ি করে। ভোরে সূর্য ওঠার সময় ওরা চলে যায়। রাতে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়।

বুড়িচং উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, ‘পতিত জলাশয়ে ওই ফুল ফোটে। চাইলে এটি অর্থকরী হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবেও এর কদর আছে। কৃষকেরা উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করব। পদ্ম ফুলের রূপ মুগ্ধ করছে এখানকার বাসিন্দাদের।’