প্রিয় শিক্ষকদের স্মৃতিচারণা

নিজের প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার। ১৫০ আসনের প্রায় পরিপূর্ণ মিলনায়তনে তখন পিনপতন নীরবতা। আবেগে চোখ ভিজে যাচ্ছিল নাছিমা আক্তারের।

শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, ‘আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবকুটুই শিক্ষকের অবদান। মা-বাবা আমাকে শুধু জন্মই দিয়েছেন। আর বাকিটুকু গড়েছেন প্রিয় শিক্ষকেরা। এখন আমি নিজে শিক্ষক। আমার সব শিক্ষার্থীকে আমি নিজের সন্তান মনে করি। আমাকে এই শিক্ষাটাও দিয়েছেন প্রিয় শিক্ষকেরা।’

গতকাল শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা উপলক্ষে এক সুধী সমাবেশ। এতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষক। সেখানে বক্তব্য দেন নয়জন শিক্ষক। নয়জন শিক্ষকের বক্তব্যই ছিল তাঁদের জীবনের প্রিয় শিক্ষকদের স্মৃতিচারণা নিয়ে। নয়জনের বক্তব্যে যেন উপস্থিত শতাধিক শিক্ষকের কথাই উঠে এসেছে। উঠে এসেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে বর্তমান শিক্ষকদের ভাবনার কথা।

সুধী সমাবেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে পড়ার সময় প্রিয় শিক্ষক যতীন সরকারকে দুঃসাহস দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনার মতো শিক্ষক কেন মফস্বল শহরের এমন একটা কলেজে পড়ে আছেন? যতীন সরকার আমাকে বলেছিলেন, “একজন মানুষ চাইলে তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারেন। সে জন্য স্থান কোনো ব্যাপার না।” তিনি তাঁর কথার প্রমাণ দিয়েছেন স্বাধীনতা পদকসহ বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদকপ্রাপ্তি ও দেশসেরা একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।’

সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্বপন দাস বলেন, ‘আমার জীবনে প্রথম ই-মেইল আইডি খোলার সময় একটি অপশন আসে, যেখানে কারও নাম লিখতে বলা হয়। আমি সেখানে আমার প্রিয় শিক্ষকের নাম লিখেছিলাম। আজও আমার প্রিয় শিক্ষকদের ভুলিনি। আমার ছেলেকেও আমি আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় দুজন শিক্ষকের কাছে নিয়ে যাই, যেন সেও আমার শিক্ষকদের আদর্শ জানতে পারে।’

প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহের প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক গোলাম হক, চর ঈশ্বরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সেলি সরকার, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক ফাতেমা ফেরদৌস, মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাবউদ্দিন, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এখলাস উদ্দিন খান, ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এস এম সফিকুল হায়দার।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইপিডিসির ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রথম আলোর স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স সমন্বয়ক ফিরোজ চৌধুরী, ময়মনসিংহে প্রথম আলোর প্রতিনিধি কামরান পারভেজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাহিদ মণ্ডল।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইপিডিসি মানুষের আর্থিক সেবার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত রয়েছে। প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা তারই একটি উদাহরণ। ফিরোজ চৌধুরী বলেন, প্রথম আলো সংবাদের পাশাপাশি অনেক সামাজিক দায়িত্ব পালন করে। প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা সারা বছর ধরে রাখতে চায় প্রথম আলো।
অনুষ্ঠানে আইপিডিসি ও প্রথম আলোর কাজের ওপর নির্মিত তিনটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সুধীজনেরা একসঙ্গে ছবি তোলেন এবং পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

আগামী ৫ অক্টোবর ঢাকায় ১০ জন শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হবে আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা অনুষ্ঠানে। সে লক্ষ্যে সারা দেশে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।