সেচ বন্ধ, বিপাকে ধানচাষিরা

গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দখাজুরা ইউনিয়নের বসন্তপুর মাঠের ১৬০ বিঘা জমির ধানের চারা বেড়ে ওঠা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নলকূপটির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এতে শতাধিক কৃষক রোপণ করা ধানের জমিতে সেচ দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা বসন্তপুর মাঠের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালিত গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে ওই নলকূপের আওতাধীন ১৬০ বিঘা রোপণ করা ধানখেতে সেচ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সদ্য রোপণ করা এসব জমিতে এখন প্রতিদিন অন্তত দুইবার করে সেচ দেওয়া দরকার। হঠাৎ করে নলকূপ বন্ধ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধানচাষিরা। বসন্তপুর গ্রামের প্রদীপ কুমার প্রামাণিক জানান, গভীর নলকূপের আওতায় তাঁর নিজেরই ৩৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ রয়েছে। টানা দুই দিন সেচ দিতে না পারলে ধানের চারা মরতে শুরু করবে।

একই অবস্থার কথা জানালেন এই নলকূপের আওতাধীন কৃষক পলাশ কুমার সরকার, বিমল কুমার ও নিপেন্দ্রনাথ সরকার। তাঁরা জানান, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি জানানোর জন্য তাঁরা শনিবার নাটোরে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের স্থলে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করবে না বলে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কৃষকদের পক্ষ থেকে নতুন ট্রান্সফরমার কেনার জন্য অর্ধেক টাকা (৭০ হাজার) কর্তৃপক্ষকে দিতে চাইলেও তারা তাতে রাজি হয়নি। পুরো টাকা নগদে দিয়ে ট্রান্সফরমার কেনাও তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান কৃষকেরা।

নলকূপটির চালক (অপারেটর) বরুন প্রামাণিক জানান, এই নলকূপ থেকে আশপাশের ১৬০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া হয়। কৃষকেরা প্রি–পেইড কার্ডে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে সেচসুবিধা নিয়ে থাকেন। তিনি প্রতি ঘণ্টায় পারিশ্রমিক বাবদ ৮ টাকা করে পান। তাঁর পক্ষে রাত জেগে ট্রান্সফরমার পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা ট্রান্সফরমারটি চুরি করেছে। এখন ধানের জমিতে সেচ দেওয়ার ভরা মৌসুম। তাই কৃষকদের পাশাপাশি তিনিও বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় কৃষক পলাশ কুমার সরকার জানান, ১৯৮২ সালে তৎকালীন বিআরডিবি কর্তৃপক্ষ বসন্তপুর সমাজকল্যাণ সমিতি গঠন করে। পরে তাঁদের ঋণের মাধ্যমে ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। সমিতির মাধ্যমে এটি পরিচালিত হতো। ১৯৯৫ সালে নলকূপটিতে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়। ২০০২ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গভীর নলকূপটিতে চার হাজার ফুট ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ নালা তৈরি করে দেয়। তখন থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে নলকূপটি। তবে নলকূপ পরিচালনার জন্য স্থানীয়ভাবে কৃষকদের নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কৃষকেরা প্রতি ঘণ্টায় ১২০ টাকা দিয়ে সেচসুবিধা গ্রহণ করেন। আকস্মিকভাবে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় চাষিরা কিছুদিন আগে রোপণ করা ধানের চারা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। সেচ দিতে না পারলে কৃষকেরা অন্তত ৪ হাজার মণ ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবেন।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী (নাটোর কার্যালয়ে দায়িত্বরত) আনছারুল করিম জানান, ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষের পক্ষে বিনা মূল্যে নতুন ট্রান্সফরমার দেওয়া সম্ভব নয়। তবে নলকূপ ব্যবস্থাপনা কমিটি অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে পরবর্তী সময়ে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দরকার। এ ছাড়া তারা সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রান্সফরমার তৈরি করেও নিতে পারে।