রাব্বানীকে 'প্রটোকল' দিতে না যাওয়ায় হলের চার কক্ষে তালা

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ‘প্রটোকল’ দিতে কিছু শিক্ষার্থী মধুর ক্যানটিনে না যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের চারটি কক্ষে তালা দিয়ে দেয় সেখানকার ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলে এ ঘটনা ঘটে।

আবাসন-সংকটের কারণে হলে বৈধ আসন না থাকায় দ্বিতীয় বর্ষের ৩২ জন শিক্ষার্থী ওই চারটি গণরুমে থাকেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বিষয়টি জানার পর তাঁরই হস্তক্ষেপে তালা খুলে দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশের এক দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। গত শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভের অন্যতম কারণ ছিল মধুর ক্যানটিনে তাঁদের অনিয়মিত থাকা। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী মধুর ক্যানটিনে আসেন।

সূর্য সেন হলের তালা দেওয়া কক্ষগুলোর কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শাখাটির আসন্ন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সৈয়দ শরিফুল আলম ওরফে শপু এই হলে গোলাম রাব্বানী গ্রুপের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গ্রুপে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘ভালো’ কক্ষে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন। তাঁর আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন না দেখে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল দুপুরে গোলাম রাব্বানী মধুর ক্যানটিনে এলে তাঁকে ‘প্রটোকল’ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ডেকে পাঠান শরিফুল। কিন্তু চার কক্ষের ৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র তিনজন সেখানে যান।

ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থী সূর্য সেন হলের চারটি কক্ষে থাকেন। কক্ষগুলো হলো ২৩৭, ২৪৮, ৪০১ (ক) ও ৬২৬ (ক)। কক্ষগুলোয় যথাক্রমে ৬, ৮, ৮ ও ১০ জন শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় হলের অতিথিকক্ষে শরিফুল ডেকে পাঠালেও সেখানে যাননি তাঁরা। তাই রাত ১০টার পর কক্ষগুলোয় গ্রুপের তৃতীয় বর্ষের কর্মীদের দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন তিনি।

জানতে চাইলে সৈয়দ শরিফুল আলম প্রথম আলোর কাছে ওই চার কক্ষে তালা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তালা দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওদের ইমিডিয়েট সিনিয়ররা (তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী) কক্ষগুলোয় তালা দিয়েছিল। কিন্তু কেন তালা দেওয়া হয়েছিল, জানি না।’

ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গতকাল মধ্যরাতে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত বিষয়টির সমাধান করছেন। পরে তাঁর হস্তক্ষেপে তালা খুলে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।