শিক্ষকের বেতের আঘাতে চোখ হারানোর শঙ্কায় স্কুলছাত্রী

আহত স্কুলছাত্রী হাবিবা আক্তার। ছবি: প্রথম আলো
আহত স্কুলছাত্রী হাবিবা আক্তার। ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের হইচই থামাতে পাশের কক্ষ থেকে বেত নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষক। একপর্যায়ে হাতে থাকা বেতটি ছুড়ে মারলে সেটি আঘাত করে এক ছাত্রীর চোখে। আঘাতের কারণে সেই স্কুলছাত্রী এখন চোখ হারানোর শঙ্কায় আছে।

ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আহত স্কুলছাত্রীর নাম হাবিবা আক্তার (৮)। সে ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম নিরঞ্জন দাস। উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কুলছাত্রীকে আজ সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

স্কুলছাত্রীর পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না থাকায় গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে সহপাঠীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে বসে গল্প করছিল হাবিবা। এ সময় পাশের কক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছিলেন নিরঞ্জন দাস। পাশের কক্ষের শিক্ষার্থীদের হইচই শুনে হাতে বেত নিয়ে তেড়ে আসেন নিরঞ্জন। একপর্যায়ে বেতটি ছুড়ে মারলে তা হাবিবার বাঁ চোখে আঘাত হানে। এ সময় তার চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে অন্য শিক্ষক ও আশপাশের লোকেরা হাবিবাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে আজ সোমবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মিঠুন রায় প্রথম আলোকে বলেন, বেতটি সরাসরি চোখে আঘাত করায় মেয়েটির বাঁ চোখটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আহত স্কুলছাত্রী হাবিবার বাবা শাহিন মিয়া বলেন, ‘স্থানীয় চিকিৎসকেরা বলেছেন আমার মেয়ের চোখের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। মেয়ের চোখ বাঁচাতে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।’

জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক নিরঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছিলেন তিনি। পাশের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের হইচইয়ের কারণে তাঁর পড়াতে অসুবিধা হচ্ছিল। এ কারণে তিনি হালকাভাবে বেতটি ছুড়ে মারলে আকস্মিকভাবে বেতটি ওই ছাত্রীর চোখে লেগে যায়। অনিচ্ছাকৃতভাবে এই ভুল করে ফেলেছেন তিনি। হাবিবার চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে মেয়েটির অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ এখনো তাঁরা পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বেত দিয়ে আঘাত করা তো দূরের কথা, শ্রেণিকক্ষে বেত নিয়ে যাওয়ারই কোনো বিধান নেই। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।