দুর্নীতিবাজদের কেন হত্যা করছেন না: হারুন

হারুনুর রশীদ
হারুনুর রশীদ

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘ক্রসফায়ারে মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যা করা হচ্ছে। দুর্নীতি যাঁরা করছে, তাঁদের কেন হত্যা করছেন না। দুর্নীতি দমন কমিশন নামে মাত্র কাজ করছে। স্বাস্থ্য খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। অথচ কোনো ব্যবস্থা নেই।’ সোমবার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

অনির্ধারিত আলোচনায় হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা চরম উদ্বেগে আছি। সারা দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গুতে কয়েক শ মানুষ মারা গেছে। কয়েক লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। আর এই ডেঙ্গু প্রতিরোধের কার্যকর পদক্ষেপ ঘোষণার মধ্যেই আছে। ইতিমধ্যে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। অকার্যকর ওষুধ ছিটিয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসেনি। জেলা ও উপজেলায় জনবল সংকটে রোগীদের সেবা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে।’

কোরবানির পশুর চামড়া সম্পর্কে হারুনুর রশীদ বলেন, দাম না পেয়ে মানুষ কোরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুতে দিয়েছে। অথচ মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির নেতারা নাকি চামড়া কিনে মাটিতে পুতে দিচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্য মানুষের মধ্যে কী দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করবে, জানি না। সব ধরনের দুধে সিসা পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দুধ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মানুষ বিক্রি করতে না পেরে দুধ মাটিতে ফেলে দিচ্ছে। এসব আলামত ভালো নয়।

সাংসদ হারুনুর রশীদ আরও বলেন, জীবন চরমভাবে অনিরাপদ। মানুষ অসহায়। সত্য কথা বলতে গেলে বলা হচ্ছে গুজব। এসব ঘটনায় কানে তুলো না দিয়ে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে জাতি উপকৃত হবে। প্রিয়া সাহা, হু ইজ প্রিয়া সাহা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে আছেন। উত্তর দিতে হবে আপনাকে। এই সংসদে বিবৃতি দিতে হবে। প্রিয়া সাহা কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছাল। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে রাষ্ট্রের থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাইনি। এ ব্যাপারে আমাদের সজিব ওয়াজেদ জয় একটি বিবৃতি দিয়েছেন। প্রিয়ার মিথ্যার দাবির পেছনে নাকি মার্কিন দূতাবাসের দুরভিসন্ধি রয়েছে। এটা সত্য হয়ে থাকলে তাহলে সে ধরনের বিবৃতি আমরা আশা করছি। ওই ঘটনায় কয়েকটি জায়গায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়েছে, আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন।

এ দিকে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, অদ্ভুত সব দুর্নীতির কর্মকাণ্ড ঘটেছে। অনিয়ম অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে জাতি এই ভয়াবহ হাস্যরসের দুর্নীতি থেকে মুক্তি পায়।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে কথা উল্লেখ করে পীর ফজলুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো সরকারের অর্জনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। একের পর একেক ঘটনা ঘটছে।

দুর্নীতি হাস্যরসের বিষয় হয়ে গেছে মন্তব্য করে পীর ফজলুর রহমান বলেন, ৫ হাজার ৫০০ টাকার বই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিনেছে ৮৫ হাজার ৫ টাকায়। এই বই ১০ কপি কেনা হয়েছে গোপালগঞ্জের সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের জন্য। এ জন্য পরিশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

অন্যান্য দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান বলেন, পুকুর খনন শিখতে বিদেশে যাবেন ১৬ জন কর্মকর্তা। এ জন্য ব্যয় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। রূপপুরের বালিশকে তোশকের নিচে নিয়ে গেছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি পর্দা কেনার ঘটনা। একটি পর্দার দাম ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্লান্ট কেনার খরচ ৫ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একটি বিএইএস জেনারেটিং প্লান্ট কেনার খরচ ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একটি ভ্যাকুয়াম প্লান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মনিটরিং প্লেট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, তিনটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার। এ রকম অবিশ্বাস্য দামে ১৬৬টি পণ্য কেনা হয়েছে।