জাপার দুই পক্ষের মিলমিশ নিয়ে সংশয়

রওশন এরশাদ, জি এম কাদের। ফাইল ছবি
রওশন এরশাদ, জি এম কাদের। ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির (জাপা) নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দৃশ্যমান সমঝোতা হলেও আসলে কতটা মিলমিশ হয়েছে, তা নিয়ে দলটিতে সংশয়ের দেখা দিয়েছে। নেতা-কর্মীদের অনেকের ধারণা, যেভাবে সাদ এরশাদকে রংপুর–৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে সাদকে ঘিরে দলে নতুন একটি পক্ষ তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে জাপার দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা ও সাদ এরশাদকে প্রার্থী করার পেছনে সরকারের একটি মহলের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা ছিল। বিষয়টি এখন নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। ফলে রওশনপন্থীদের অবস্থান শক্ত হয়েছে। এতে নেতাদের অনেকে পক্ষ বদল করতে পারেন। যদিও এখন পর্যন্ত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলীয় সাংসদের বড় অংশ জি এম কাদেরের পক্ষে আছেন।

অবশ্য দুপক্ষের সমঝোতার পেছনে সরকারি মহলের ভূমিকার বিষয়টি স্বীকার করেন না জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দল আমরা চালাই, নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করি। সব প্রতিকূল অবস্থাতেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি। আমাদের কেউ পরিচালিত করছে, এটা ঠিক না।’

এদিকে সাদ এরশাদকে প্রার্থী করার বিরুদ্ধে এত দিন স্থানীয় নেতাদের মধ্যে যাঁরা সরব ছিলেন, তাঁরাও এখন চুপচাপ আছেন। জাপার নেতা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমানও চুপ। দলের মনোনয়নতালিকার শীর্ষে ছিলেন জাপার রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির। তিনি গতকাল রংপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘এই নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ালাম।’ সাদের নির্বাচন নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। জি এম কাদেরের পক্ষে থাকা জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই পক্ষকে এক করার জন্য অনেক অযৌক্তিক দাবি মানতে হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর পার্টির ভাঙন ঠেকাতে, ঐক্যের স্বার্থে অগ্রহণযোগ্য আবদার আমাদের মেনে নিতে হয়েছে।’

আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে সম্মেলন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অবশ্য রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফকরুল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সমঝোতায় ​গিয়ে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান মেনে নিয়েছি। আগামী ৩০ নভেম্বর সম্মেলন হবে। জি এম কাদের সাহেবই বলেছেন, সম্মেলনে নেতা-কর্মীরা যাঁকে নেতা বানাবেন, তাঁকে মেনে নেবেন।’

আ.লীগের সঙ্গে স​মঝোতার চেষ্টা

সাদ এরশাদকে প্রার্থী ঠিক করার পর এলাকায় গুঞ্জন ছড়ায় যে রংপুরে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার সমঝোতা হচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল সকালে জাপার বনানীর কার্যালয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে জি এম কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কথা বলার চেষ্টা করছি, আলাপ–আলোচনা কিছুটা করেছি। আমরা এখনো কোনো ঐকমত্যে আসতে পারিনি। আমরা কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছি, উনারাও বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলেছেন।’ তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) মনোনয়ন দিয়েছেন। নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে নেমেছি মাঠে থাকার জন্যই।’

৯ জনের মনোনয়নপত্র জমা

গতকাল রংপুর নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম, জাতীয় পার্টির রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ ও বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান।

রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন জানান, এই তিনজনসহ ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা হলেন এরশাদের ভাতিজা (স্বতন্ত্র) আসিফ শাহরিয়ার, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি (স্বতন্ত্র) কাওছার জামান, এনপিপিপির শফিউল আলম, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল, গণফ্রন্টের মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক।

গতকাল বেলা পৌনে তিনটার দিকে জাপার মহাসচিব মসিউর রহমানের নেতৃত্বে গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচন কার্যালয়ে যান সাদ এরশাদ। তবে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকেই দেখা যায়নি। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাদ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করতে চান। আর দলের মধ্যে যে বিরোধ, সেটা দলীয় ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন তিনি।