যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব ঘুটাবাছা নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনা তদন্তে গঠিত উপজেলা শিক্ষা বিভাগের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবদুল হালিম বিদ্যালয়ের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রীকে বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়ান। এ সময় তিনি নানা অজুহাতে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও অশ্লীল কথাবার্তা বলেন।

অভিযোগের সূত্র ধরে গত শনিবার সকালে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে অন্তত ১০ জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলে, প্রধান শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর সময় তাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। পরে কাউকে এ কথা যাতে তারা না বলে, এমনটা বলে শাসিয়ে দেন। প্রতিদিনই তিনি কাউকে না কাউকে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে ডেকে অথবা প্রাইভেট পড়ানোর সময় এমন আচরণ করেন।

একজন অভিভাবক বলেন, তাঁর নাতনি গত জুলাই মাসে স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসে। পরে বলে, হেডমাস্টার তার শরীরে হাত দিয়েছে। বিষয়টি তিনি ওই বিদ্যালয়ের নেসার উদ্দীন নামে অপর একজন সহকারী শিক্ষককে জানান। পরদিন তাঁর নাতনি স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক আবদুল হালিম এসব কথা কাউকে বললে পিটিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেবেন বলে হুমকি দেন।

অপর একজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকেও এভাবে যৌন হয়রানি করা হয়। তিনিও বিষয়টি নেসার উদ্দীনকে জানান। নেসার উদ্দীন এই ঘটনা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে জানান। তখন সভাপতিকে টাকা দিয়ে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে নেসার উদ্দীনকেও স্কুল থেকে বদলি করা হয়। তবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে তিনি ২৮ জুলাই প্রধান শিক্ষক আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

>

দক্ষিণ-পূর্ব ঘুটাবাছা নুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রিয়াজ উদ্দীন বলেন, অভিভাবকদের অভিযোগের ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাকার বিনিময়ে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আবদুল হালিম বলেন, ‘বিষয়টি ষড়যন্ত্র। সহকারী শিক্ষক নেসার উদ্দীন আমার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের দিয়ে এসব মিথ্যে অভিযোগ করিয়েছে।’

নেসার উদ্দীন বলেন, ছাত্রীরা ভুক্তভোগী হয়ে অভিযোগ করেছে। এখানে তাঁর কোনো হাত নেই। প্রধান শিক্ষক নিজের কৃতকর্ম ঢাকতে তাঁর ওপর দায় চাপাচ্ছেন।

উপজেলা শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলার চার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকরী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম হায়দার বলেন, আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে চার ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিও) কাছে ২৭ আগস্ট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

ডিপিও মিজানুর রহমান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক এস এম ফারুক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন তিনি হাতে পেয়েছেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর রোববার ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।