ঝিনাইদহের গুদামে ২ কোটি টাকার বীজ মজুত, ৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ

কাগজ-কলমে মজুত কম। অথচ বাস্তবে প্রায় ২ কোটি টাকার ধানবীজ অতিরিক্ত মজুত ছিল। আর এ অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ঝিনাইদহের মহেশপুরের দত্তনগর খামারের আওতাধীন তিনটি বীজ উৎপাদন খামারের তিন উপপরিচালকসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিএডিসির সচিব আবদুল লতিফ মোল্লা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গতকাল সোমবার এক আদেশে এই বহিষ্কার করা হয়। আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, বহিষ্কৃত কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড ছিল দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ, চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তসরুপ বা প্রতারণার শামিল।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই কর্মকর্তারা হলেন গোকুলনগর বীজ উৎপাদন খামারের উপপরিচালক তপন কুমার সাহা, করিঞ্চা খামারের উপপরিচালক ইন্দ্রজিৎ চন্দ্র শীল, পাথিলা খামারের উপপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান তালুকদার ও যশোর বীজ পক্রিয়াজাত কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. আমিন উল্ল্যা। ওই আদেশে আরও বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাঁরা কর্মস্থলের বাইরে যেতে পারবেন না। সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় তাঁরা বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্ত হবেন।

২০১৮-১৯ উৎপাদন বর্ষে দত্তনগর খামারের আওতাধীন গোকুলনগর বীজ উৎপাদন খামার থেকে উৎপাদিত ১১৭ দশমিক ২৬০ মেট্রিক টন ও পাথিলা বীজ উৎপাদন খামার থেকে উৎপাদিত ৬৯ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন, মোট ১৮৬ দশমিক ৭৬০ মেট্রিক টন এসএল-৮ এইচ জাতের হাইব্রিড বীজ যশোর বীজ পক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু সরেজমিনে যাচাইয়ের মাধ্যমে আরও অতিরিক্ত ১২৯ দশমিক ২২০ মেট্রিক টন বীজ পাওয়া গেছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, গোকুলনগর বীজ উৎপাদন খামার থেকে উৎপাদিত ৭৫ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন, পাথিলা বীজ উৎপাদন খামার থেকে ৩২ দশমিক ১১০ মেট্রিক টন ও করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামার থেকে ২২ দশমিজ ৩৫ মেট্রিক টন এসএল-৮ এইচ জাতের হাইব্রিড বীজ কোনো ধরনের চালান ছাড়াই যশোর বীজ পক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত মজুত করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ে। গত ৩০ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘গুদামে দুই কোটি টাকার অতিরিক্ত ধানবীজ মজুত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিএডিসির সচিব আবদুল লতিফ মোল্লা স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিধিবহির্ভূতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গোকুল নগর, পাথিলা ও করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামারে ২০১৮/১৯ উৎপাদন বর্ষে কর্মসূচি বহির্ভূত অতিরিক্ত ১২৯ দশমিক ২২ মেট্রিক টন এসএল-৮এইচ হাইব্রিড জাতের ধানবীজ পক্রিয়াজাত কেন্দ্র যশোরে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এসব কর্মকর্তা অতিরিক্ত বীজ উৎপাদনের পরিমাণ নিয়মানুযায়ী মজুত ও কাল্টিভেশন রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেননি। এমনকি অতিরিক্ত কোনো বীজ পাঠানোর কোনো চালান বা তথ্যপ্রমাণ খামারে রাখেননি।

লতিফ মোল্লার চিঠিতে বলা হয়, ‘উক্ত ধানবীজ অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেরা আত্মসাৎ করার জন্য সংরক্ষণ ও উৎপাদনবিষয়ক প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।’

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর গোকুলনগর, পাথিলা ও করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামার থেকে কৌশলে এই বীজ চুরি করে বিক্রির জন্য পাঠানো হয় যশোর শেখহাটী বীজ পক্রিয়াজাত কেন্দ্রে, যা বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদপত্রে লেখালেখিও হয়। বিষয়টি তদন্ত করতে এসে সত্যতা পান তদন্ত কর্মকর্তারা। বিএডিসির জিএম (বীজ) নরুন নবী সরদার ও অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (খামার) তপন কুমার আইচ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামার পরিদর্শন করে তদন্ত করেন। এরপর প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।