ক্যানসারের ভয় দেখিয়ে ব্লেড দিয়ে নারীর স্তন কেটে ফেলে দিলেন তিনি

ক্যানসারের ভয় দেখিয়ে ব্লেড দিয়ে নারীর স্তন কেটে ফেলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ভুয়া চিকিৎসক মানিক তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত
ক্যানসারের ভয় দেখিয়ে ব্লেড দিয়ে নারীর স্তন কেটে ফেলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ভুয়া চিকিৎসক মানিক তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ভয় দেখিয়ে ব্লেড দিয়ে এক নারীর স্তন কেটে ফেলেছেন মানিক তালুকদার (৪০) নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মানিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাত আটটার দিকে পাঁচহাট বাজারের ইকবাল হোমিও ফার্মেসি নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযুক্ত মানিক তালুকদারের বাড়ি একই জেলার মদন উপজেলার কাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আমির উদ্দিন তালুকদারের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা, মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানিক তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পাঁচহাট বাজারে ইকবাল হোমিও ফার্মেসিতে বসে প্রতারণা করে আসছিলেন। পাঁচহাট এলাকার শেফালি আক্তার (৩৫) নামের দরিদ্র এক নারী বাঁ স্তনের ব্যথায় ভুগছিলেন। এ সময় ইকবাল হোমিও ফার্মেসির পরিচালক এস এইচ এম ইকবাল চৌধুরী ওই নারীকে নিয়ে মানিক তালুকদারের কাছে যান। 

পরীক্ষার পরে মানিক ওই নারীকে বলেন, তাঁর স্তনে চাকা হয়েছে। এটি একধরনের খুবই ক্ষতিকর টিউমার, যা ক্যানসারে রূপ নিয়েছে। আর কিছুদিন থাকলে সারা শরীরে ক্যানসার ছড়িয়ে যাবে। এতে তিনি মারা যেতে পারেন। তাই দ্রুত এই স্তন কেটে ফেলতে হবে।

মানিক তালুকদার ওই নারীকে কম খরচে নিজেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। মানিক তাঁকে বলেন, বাইরে হাসপাতালে গিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করালে কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন। আর তিনি মাত্র ২০ হাজার টাকায় তাঁকে চিকিৎসা করে ভালো করে দেবেন। এরপর গত ৭ এপ্রিল মানিক ওই হোমিও ফার্মেসিতে ব্লেড দিয়ে নারীর স্তন কেটে ফেলে দেন।

কিন্তু অপারেশনের পর থেকে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। পরে মানিকের কাছে এলে তিনি কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে বলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। বর্তমানে অপারেশন করা স্থানটিতে পচন ধরে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় এ বিষয়ে শেফালি আক্তার গত সোমবার সন্ধ্যায় খালিয়াজুরী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে ওই দিন রাত পৌনে নয়টার দিকে মানিক তালুকদারকে আটক করে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে ওই নারীর অভিযোগটি মামলা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হলে মানিককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ৩২৬, ৩৬০, ৪১৯, ৪২০, ৪০৭, ১১৪ ধারায় মামলা হয়েছে।

ওসি এ টি এম মাহমুদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানিক ভুয়া ডাক্তার সেজে দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণা করে আসছেন। শেফালি আক্তার নামের ওই গরিব নারীর বাঁ স্তন ক্যানসারের কথা বলে তিনি ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে দিয়েছেন। এখন ওই স্থানে পচন ধরেছে। শেফালির স্বামী মারা গেছেন। দুটি ছোট সন্তান রয়েছে। খুবই কষ্ট করে মানুষের সাহায্য নিয়ে চলেন তিনি। আমি তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পরামর্শ দিয়েছি।’ ওসি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মানিক তাঁর দোষ স্বীকার করেছেন। মানিকের তেমন কোনো পড়া লেখা নেই। তিনি হোমিও ডিএইচএমএস ডিগ্রি লিখে নারী ও শিশু, নাক, কান, গলাসহ সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।