রেগে ওড়নায় টান দাদির, প্রাণ গেল নাতনির

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

পুরোনো একটা ছাতা ভেঙে ফেলায় নাতনি মুনছুরা মুন্নুর (১১) ওপর রাগ করেন দাদি মেহেরজান বেওয়া (৫৬)।

একসময় দুজনের ঝগড়া লেগে যায়। ঝগড়ার মাঝে দাদিকে গালাগাল দিতে শুরু করে নাতনি মুন্নু। দাদি রেগে যান। নাতনির গলায় থাকা ওড়না ধরে মারেন টান। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় নাতনি।

মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে গত সোমবার, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের পোড়াকয়া গ্রামে।

ঘটনার পর দাদি মেহেরজান বেওয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।

পুলিশ জানায়, প্রথমে বিষয়টিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মেহেরজান। তবে পরে পুলিশের কাছে তিনি নিজেই প্রকৃত ঘটনা স্বীকার করেন।

পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পোড়াকয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মুন্টু হোসেন দুই শিশুকন্যা রেখে কয়েক বছর আগে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর দুই শিশুকে তাদের দাদির কাছে রেখে মা পারুল বিবি রাজশাহী শহরে বাসাবাড়িতে কাজ করতে চলে যান। দাদি মেহেরজান ভিক্ষা করে নাতনিদের লালনপালন করে আসছিলেন। পারুল মাঝেমধ্যে বাড়িতে এসে মেয়েদের সঙ্গে দেখা করে কিছু খরচ দিয়ে চলে যেতেন।

পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সোমবার রাতে মেহেরজানের পুরোনো একটি ছাতা নাতনি মুনছুরা মুন্নু ভেঙে ফেলে। এ নিয়ে ওই রাতেই দাদি ও নাতনির মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে দাদিকে গাল দেয় নাতনি। এতে রেগে যান দাদি। নাতনিকে ভয় দেখানোর জন্য তার গলায় থাকা ওড়না ধরে টান দেন মেহেরজান। গলায় ফাঁস লেগে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নাতনি মুনছুরা মুন্নু। এতে মেহেরজান হতভম্ব হয়ে পড়েন।

পরদিন ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে থানায় খবর দেন মেহেরজান। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। মামলা দায়েরের জন্য সম্ভাব্য বাদী হিসেবে মেহেরজানকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। কেন তাঁর নাতনি আত্মহত্যা করল, তা মেহেরজানের কাছে জানতে চায় পুলিশ। একপর্যায়ে তিনি আসল ঘটনা খুলে বলেন।

বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৌরভ কুমার চন্দ বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মেহেরজান জানান, ভয় দেখানোর জন্য তিনি তাঁর নাতনির গলায় থাকা ওড়না ধরে টান দিয়েছিলেন। হত্যার উদ্দেশ্যে তিনি এ কাজ করেননি।

পরে পুলিশ নিহত শিশুর মা পারুলকে থানায় ডেকে পাঠায়। ঘটনা জানার পর তিনি তাঁর শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় পুলিশ মেহেরজানকে গ্রেপ্তার দেখায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নিয়ামুল হক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া মেহেরজান গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।