বিচার চান রুমানা সুলতানা
ইয়াসির আলভীর চোখে-মুখে যন্ত্রণার ছাপ। ট্রমা সেন্টারের ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে শুয়ে আছেন তিনি। পেলভিসে আঘাত। শরীরের নিচটা অবশ! আর কি তিনি উঠে দাঁড়াতে পারবেন? আবার কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে যেতে পারবেন?
কেমন আছেন, ইয়াসির?
ব্যথা। বড় বেশি ব্যথা!
ইয়াসির আলভীর বাবা মারা গেছে ছয় দিন আগে, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯। উত্তরায় ভিক্টোর ক্ল্যাসিকের একটা বাস আলভীর বাবাকে ধাক্কা দিয়ে আরেকটা বাসের পেছনে ফেলে পিষে মারে। বাবা পারভেজ রব। খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ, সুরকার। বিখ্যাত শিল্পী আপেল মাহমুদ সম্পর্কে তাঁর ভাই। পারভেজ রবের সুরে গানও গেয়েছেন আপেল মাহমুদ। টেলিভিশন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘দৃষ্টিপাত’-এর জন্য এই সেদিন দুজন মিলে গান রেকর্ড করেছেন। সুর করেছেন পারভেজ রব, কণ্ঠ দিয়েছেন আপেল মাহমুদ। আশরাফ কামালের লেখা গানটির কথা হলো, ‘বাঙালি আমি গর্বিত আমি’। গান রেকর্ড হয়েছে, সুরকার আর এই পৃথিবীতে নেই। তিনি শুয়ে আছেন কবরের মাটিতে।
তাঁর কুলখানি হবে রোববার। শনিবার রাতে একই কোম্পানির বাসের চাপায় পঙ্গু হতে বসেছেন পারভেজ রবের ছেলে ইয়াসির আলভী। একই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন আলভীর বন্ধু মেহেদী।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে আলভীকে দেখতে যাই। আলভীর মা রুমানা সুলতানা নির্বাক। আলভীর ছোট বোন ক্লাস সিক্সে পড়া রামিসা ইবনাত কাতর নয়নে তাকিয়ে আছে। টেলিভিশনের ক্যামেরা আসছে। ডাক্তাররা তৎপর।
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে বাসের ধাক্কায় স্বামীকে হারানো, আর একই কোম্পানির বাসের ধাক্কায় সন্তানের মারাত্মক জখম। সন্তানের বন্ধুর মৃত্যু।
কী বলবেন রুমানা সুলতানা?
কিছুই যেন বলার নেই তাঁর। ন্যায়বিচার চান। স্বামীকে হারিয়ে বিচার চান। পুত্রের বন্ধুর হত্যার বিচার চান। তাঁর পুত্রকে লড়তে হচ্ছে পঙ্গুত্বের বিরুদ্ধে, তারও বিচার চান।
পারভেজ রবের মৃত্যুর পর তবু বাসমালিকদের সঙ্গে দেনদরবার চলছিল। মেহেদী হত্যার পর, ইয়াসির আলভীর মারাত্মক জখমের পর সেসবও বন্ধ।
সাংবাদিকেরা আসেন। ক্যামেরা আসে।
কিন্তু হর্তাকর্তারা কেউ আসেন না।
রুমানা সুলতানার চোখের জলও শুকিয়ে আসে।
কিশোরী রামিসা ইবনাত কথা হারিয়ে মূক হয়ে যায়।