'নেকাব খুলিয়ে ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম'

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকা মহানগর বিশেষ আদালত, ১১ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান রাজা
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকা মহানগর বিশেষ আদালত, ১১ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান রাজা

মাদ্রাসাশিক্ষার্থী নুসরাত জাহানের আপত্তিকর ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে নুসরাতের মা ও ভাই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই দুজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন আদালত।

নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার আদালতকে বলেন, ‘ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা আমার মেয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানি করেন। সেই ঘটনায় মামলা করার জন্য গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানাতে যাই। আমি এবং আমার ছেলেকে ওসির কক্ষে ঢুকতে না দিয়ে আমার মেয়ে নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য নেন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়ের মেকআপ (নেকাব) খুলিয়ে নিজের মোবাইল দিয়ে ভিডিও করেছেন। ওসির কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর নুসরাত এই কথা বলে অনেক কান্নাকাটি করে।’

শিরিন আক্তার আদালতকে বলেন, ‘মেয়েকে শ্লীলতাহানি করায় আমি বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে সোনাগাজী থানায় মামলা করি। এই মামলার পর গত ৬ এপ্রিল যে সময় নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হয় তার ৩০ মিনিট পর ওসি মোয়াজ্জেম সেই ভিডিও মিডিয়ায় ছেড়ে দেন।'

শিরিন আক্তারের জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হলে তাঁকে জেরা করেন মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। জেরার জবাবে শিরিন আক্তার আদালতকে বলেন, ‘নুসরাতের ভিডিও যখন ওসি মোয়াজ্জেম রেকর্ড করেন তখন তাঁর রুমে আর কে কে ছিল, তা আমি জানি না। কারণ আমি তখন ওই রুমে ছিলাম না। আমাকে ওই রুমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবীর আরেক প্রশ্নের জবাবে নুসরাতের মা বলেন, ‘মোয়াজ্জেম হোসেন আমার মেয়ের যে ভিডিও করেছিল, তা সারা বিশ্ব দেখেছে। এই ভিডিও ছেড়ে দেওয়ায় আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাক্ষ্য দেন ফেনীর সোনাগাজীর নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের মা ও ছোট ভাই। ঢাকা মহানগর বিশেষ আদালত, ১১ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান রাজা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাক্ষ্য দেন ফেনীর সোনাগাজীর নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের মা ও ছোট ভাই। ঢাকা মহানগর বিশেষ আদালত, ১১ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান রাজা

নুসরাত জাহান রাফির ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান আদালতকে বলেন, ‘মামলা করতে যাওয়ার পর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁদের তাঁর রুমে ঢুকতে দেয়নি। আমার বোনকে ভিডিও করার নামে আপত্তিকর প্রশ্ন করেছেন। নেকাব খুলে ভিডিও করায় আমার বোন ওসির রুম থেকে বেরিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছিল। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার পর আমাদের কোনো প্রকারের নিরাপত্তা দেননি ওসি। যদি ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আমার বোনকে নিরাপত্তা দিতেন, তাহলে হয়তো আমার বোন এইভাবে মারা যেত না।’

নুসরাতের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। আদালত তা আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেন। এর ২০ দিনের মাথায় গত ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে কারাগারে আছেন তিনি। এর আগে গত ১৭ জুলাই মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাদে ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানের শরীরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর ১০ দিন আগে নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।