ঢাবিতে পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি: আইনগত ব্যবস্থার দাবি টিআইবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্টে পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্র ভর্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। উত্থাপিত অভিযোগের ফলে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে উল্লেখ করে এর মোকাবিলার জন্য সৎসাহসের সঙ্গে অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সংস্থাটির।

আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ দাবি জানায়।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকে ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ কথা জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অভিযোগ সঠিক হলে তা হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। উত্থাপিত অভিযোগ বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যৎ তথা মেধাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সকল প্রত্যাশার জন্য অশনিসংকেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য অপরিহার্য, অন্যদিকে নিয়মনীতি অনুসরণ করে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চার মাধ্যমে ভর্তি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও কর্তৃপক্ষের গুরুদায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ব্যত্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্বের অবস্থাকে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সুবিধা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে পরিণত করার যে কোনো প্রয়াসকে কর্তৃপক্ষ প্রতিহত করবেন, আমরা এই প্রত্যাশা করি। অন্যথায় গুণগত শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে যুগোপযোগী বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে যোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য যুব সমাজের যে স্বপ্ন তা ধূলিসাৎ হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় বা অন্য কোনো সাময়িক সুবিধা অন্বেষী স্বার্থান্বেষী চক্রান্তের কাছে জিম্মি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের আত্মঘাতী অবস্থান প্রতিরোধের আহ্বান জানায় টিআইবি।

উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে একদিকে যেমন এ অনিয়ম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে, অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গভীরতর আস্থাহীনতার শিকার হবে বলে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

উল্লেখ্য, গত রোববার প্রথম আলোয় ‘পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হয়ে ডাকসু নেতা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রলীগের ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি হন। নির্বাচন করতে আগ্রহী এ ৩৪ জনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সম্পাদক ও সদস্য পদে নির্বাচনে আটজন অংশ নেন। তাঁদের মধ্য বিজয়ী হন সাতজন। এ ছাড়া দুটি হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এর মধ্যে একজন নির্বাচিত হন, অন্যজন পরাজিত হন। আরেকজন ছিলেন ছাত্রলীগের ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য। ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল ওই প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায়। কিন্তু তাঁদের কেউই তাতে অংশ নেননি।