এই শিশুকে চেনেন

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার একটি গলিতে অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় বুধবার সকালে পড়ে ছিল শিশুটি। তার নাম-পরিচয় এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার একটি গলিতে অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় বুধবার সকালে পড়ে ছিল শিশুটি। তার নাম-পরিচয় এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো

বুধবার বেলা ১১টা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে দনিয়া কলেজের পেছনের গলিতে অচেনা এক যুবকের কথোপকথনে থমকে দাঁড়ালাম। তিনি পথচারীদের কাছে সাহায্য চাইছিলেন একটি শিশুর জন্য।

গলিটি বেশ সরু। কাছে গিয়ে দেখা গেল, পরনে কালো রঙের টি-শার্ট ও কালো রঙের জিনসের প্যান্ট পরা এক শিশু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। শিশুটির বয়স আনুমানিক ৯ বছর, রক্ত ঝরছিল মাথার পেছন থেকে। রাস্তায় পড়ে থাকা শিশুটিকে ওঠানোর জন্যই সেই যুবক সাহায্য চাইছিলেন সবার কাছে। কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার করে তিনি সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করছিলেন যে শিশুটির মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। যুবকটির চিৎকারে আশপাশে কিছু মানুষ জড়ো হলেন। কেউ কেউ আবার বলছিলেন, এই শিশুকে তাঁরা অনেকক্ষণ ধরেই নাকি দেখছেন। তবে শিশুটির জন্য কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন না। হয়তো তাঁরা ভাবলেন, কত শিশুই তো রাস্তায় পড়ে থাকে। এ আর এমন কি!

শেষ পর্যন্ত ওই যুবক কারও সাহায্যের তোয়াক্কা না করে নিজেই শিশুটিকে কোলে তুলে নিলেন। অফিস বাদ দিয়ে সঙ্গী হলেন এই সংবাদকর্মীও। জানা গেল, শিশুটি আহত অবস্থায় পড়ে ছিল এই গলিতে।

ওই যুবকের নাম হাসিবুর রহমান। তিনি আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল আছে কি না। একজন বললেন, পাশেই একটি হাসপাতাল আছে। তখন হাসিবুর কোলে করে শিশুটিকে স্থানীয় ‘অনাবিল হাসপাতালে’ নিয়ে গেলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর শিশুটির মাথায় ব্যান্ডেজ করা হলো।

এরপর বিপাকের শুরু। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির পরিচয় জানতে চাচ্ছিল। কিন্তু শিশুটির পরিচয় জানতাম না দুজনের কেউই। যখন শিশুটি একটু স্বাভাবিক হলো তখন বোঝা গেল, শিশুটি ঠিকমতো কথা বলতে পারে না।

হাসিবুর তৎক্ষণাৎ ৯৯৯-এ ফোন দিলেন। যোগাযোগ করা হলো যাত্রাবাড়ী থানার সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরই থানা থেকে হাসপাতালে এলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো.শাহীন। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা বা অভিভাবকদের ব্যাপারে শিশুটি কিছুই বলতে পারে না। শেষে পুলিশ কর্মকর্তা মো. শাহীন শিশুটিকে নিয়ে গেলেন যাত্রাবাড়ী থানায়।

এসআই মো. শাহীন আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, এখন পর্যন্ত শিশুটির নাম-পরিচয় বা ঠিকানা কোনো কিছুই জানা যায়নি। এখনো শিশুটি যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশের হেফাজতেই রয়েছে। কেউ যদি শিশুটির পরিচয় জানেন, তবে যোগাযোগ করতে পারেন যাত্রাবাড়ী থানায়।