ফেসবুকে 'ওসি'র আপত্তিকর ছবি

প্রতীকী ছবি। রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। রয়টার্স

কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে এক নারীর বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ক্লিপিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড হয়েছে। ‘প্রিয়া সুলতানা’ নামের একটি আইডি থেকে গত সোমবার সকালে ছবি ও ভিডিও আপলোড হয় এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার তা সরিয়েও ফেলা হয়। বিষয়টি কটিয়াদীসহ জেলা সদরে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত মঙ্গলবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওসির করা সাধারণ ডায়েরির আলোকে পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেন।

ছবির মানুষ দুজন নিজেরা নন, প্রযুক্তির কারসাজি কাজে লাগিয়ে সম্মানহানির উদ্দেশ্যে পরিচিতজন এই কাজ করেছেন এমন অভিযোগ এনে ওই নারী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। মামলাটি হয়েছে সোমবার রাতে। আসামি দুজন। একজন হলেন মো. হিমেল (২৮), অপরজন সৈয়দ মুরছালিন দারাশিকো (৩০)। সৈয়দ মুরছালিন কটিয়াদী প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং বাংলা টিভির স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। আর হিমেল (২৮)  চরিয়াকোনা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় গাড়িচালক।

মামলার পর পুলিশ রাতেই নিজ নিজ বাড়ি থেকে দুই আসামিকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। রাতেই সৈয়দ মুরছালিনের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে হিমেলকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওসির দাবি, ছবির মানুষটি তিনি নন। ষড়যন্ত্র করে একটি পক্ষ অন্য কারও শরীরে তাঁর ছবির মাথা যুক্ত করে দিয়েছে।

ওই নারীর স্বামী ২০ বছর ধরে প্রবাসে রয়েছেন। ১৬ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁর দাবি, মুখটি তাঁর হলেও শরীর তাঁর নয়। বিশেষ উদ্দেশ্যে সম্পাদনা করে পক্ষটি ওসির সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।

মামলার আরজিতে ভিডিও আপলোড করার কথা উল্লেখ নেই।

এজাহার থেকে এবং ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে হিমেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তখন থেকে হিমেল তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইতেন। একপর্যায়ে বন্ধুত্ব হয়ও। ২০১৭ সালের শুরু দিকে জানতে পারেন হিমেল একটি হত্যা মামলার আসামি। তখনই তিনি কথা বলা বন্ধ করে দেন। এতে হিমেল বেশ ক্ষুব্ধ হন এবং কথা না বলার কারণে তাঁকে জড়িয়ে হিমেল কুৎসা রটাতে থাকেন। একপর্যায়ে হিমেল তাঁর ইমো আইডি হ্যাক করেন এবং এর মাধ্যমে তাঁদের স্বামী–স্ত্রীর গোপনীয় ছবি নিয়ে নেন। তাঁকে ভয় দেখানোর জন্য এসব ছবি বিভিন্নজনের মেসেঞ্জারে পাঠান। তখন প্রতিকার পেতে ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি হিমেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সে সময় ওসির দায়িত্বে ছিলেন জাকির রাব্বানী। ওসি তখন হিমেলকে ডেকে এনে শাসিয়ে দেন। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। হিমেল আরও ক্ষুব্ধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন।

এ অবস্থায় গত ঈদুল আজহার কিছুদিন আগে ওই নারীর বিরুদ্ধে হিমেল থানায় মামলা করেন। মামলার অভিযোগ, হিমেলের কাছ থেকে তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে আর পরিশোধ করছেন না। ঘটনার সূত্র ধরে ঈদের আগে বর্তমান ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত তাঁকে (নারী) নিজ কার্যালয়ে তলব করেন। কিন্তু দেনা–পাওনার বিষয়টি মীমাংসা হয়নি। গত ২৯ আগস্ট হিমেল নিজের ইমো আইডি থেকে ওই নারীর দেবরের মুঠোফোনে এক পুরুষের সঙ্গে তাঁর দুটি আপত্তিকর ছবি পাঠান। ছবির পুরুষ অপরিচিত। ৯ সেপ্টেম্বর প্রিয়া সুলতানা নামের ফেসবুক আইডি থেকে ওসি ও তাঁকে জড়িয়ে মন্দ কথা লেখা হয়।