হাটে সবজির আড়ালে অস্ত্রের কেনাবেচা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন স্পট বিছনাকান্দি। পাশের সোনারহাট–সংলগ্ন ভারতের লাকাটা বাজার (লাংখাট বাজার)। এই বাজারে স্থানীয় দুই দেশের বাসিন্দারা নিজেদের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের বেচাকেনা করে আসছে। কিন্তু তার আড়ালে দুই বছর ধরে বাজারটিকে অস্ত্র কেনাবেচার জন্য ব্যবহার করে আসছিল চোরাকারবারিরা।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। এই অস্ত্রের চোরাকারবারি চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে তিনজনকে আটক করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল। ওই তিনজন অস্ত্র চোরাচালানের একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। আটকের সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি রিভলবার উদ্ধার করা হয়। এরই সূত্র ধরে গত মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটের সীমান্ত এলাকা গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি নোয়াগাঁও এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় আটক করা হয় আরব আলী নামের এক ব্যক্তিকে। তাঁর কাছে পাওয়া যায় দুটি রিভলবার। পুলিশ বলছে, এই আরব আলীই অস্ত্র চোরাচালান চক্রটির মূল হোতা।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ঢাকায় সিটিটিসি সদস্যদের হাতে আটক হওয়া তিনজনের মধ্যে ছিলেন আবদুস শহীদ ও আনসার মিয়া নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা। ওই দুজন গোয়াইনঘাটের আরব আলীর কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেচাকেনা করে আসছিলেন। আরব আলীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, আটক হওয়া শহীদ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এবং আনসার যুবদলের নেতা। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা অস্ত্র রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড—দুই কাজেই ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা পুলিশের। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী লাকাটা বাজারে সপ্তাহে দু-তিন দিন সীমান্ত হাট বসে। এই হাটে  দুই দেশের স্থানীয় লোকজন নিজের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বেচাকেনা করে। ওই বাজারে সবজি বিক্রির আড়ালে প্রায় দুই বছর ধরে অস্ত্র বেচাকেনা চলছিল বলে মনে করছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারতের বারিক খাসিয়া নামের এক ব্যক্তি সবজির আড়ালে আরব আলীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আসছেন। গত দুই বছরে তিনটি চালানে ১২টি অস্ত্র দেশে নিয়ে এসেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন আরব আলী। সেসব অস্ত্র তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে এনে শহীদ ও আনসারের হাতে দিতেন। তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেগুলো বিক্রি করতেন। 

প্রায় ছয় মাস আগে আরব আলী চারটি অস্ত্র সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে নিয়ে আসেন। পরে সেগুলোর মধ্যে তিনটি শহীদ ও আনসারকে দেন। সেই অস্ত্রসহ ঢাকার সায়েদাবাদে সিটিটিসির সদস্যদের হাতে আটক হন তাঁরা। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় পুলিশ নজরদারি বাড়িয়েছে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে আরব আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে একটি পয়েন্ট ২২ বোর এবং একটি পয়েন্ট ৩২ বোরের রিভলবার।

গোয়াইনঘাট এলাকার আরেক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে পুলিশ খুঁজছে জানিয়ে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, অস্ত্র চোরাচালানে তাঁর নামও এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে আগে এ রুটে অস্ত্র চোরাচালানের তথ্য ছিল না। ঢাকায় তিনজন অস্ত্রসহ আটকের পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। এরপর সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।’ বর্তমানে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশও বাড়তি নজরদারি করছে বলে জানান তিনি। 

 এদিকে অস্ত্র উদ্ধার ও আটকের ঘটনায় সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় মামলা হয়েছে। গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে আরব আলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তথ্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।