মাঠে খেলাধুলা বন্ধ ছাত্ররা আন্দোলনে

>

বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।  প্রথম আলো
বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। প্রথম আলো

শিক্ষার্থীরা স্কুল টিফিনে নিম্নমানের নাশতা পরিবেশন, শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা নষ্ট থাকাসহ আরও কিছু অভিযোগ করেছে।

বগুড়া জিলা স্কুল মাঠে খেলা বন্ধ রেখে ঘাস চাষের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার ক্লাস বর্জন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। জিলা স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেছে। জেলা প্রশাসক জিলা স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। 

স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিলা স্কুল মাঠ দীর্ঘদিন ধরে বেহাল ছিল। বর্ষাকালে একটু বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমত। আবার সারা বছর মাঠে সরকারি-বেসরকারি সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের সভা–সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলত। অনুষ্ঠান আয়োজনে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে স্কুল মাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী থাকত। গত বর্ষার আগে সরকারি অর্থে মাঠ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। এরপর মাঠের চারদিকে বাঁশের বেড়া তুলে সেখানে লাগানো হয় ঘাস।

প্রধান শিক্ষক মোস্তাক হাবিব বলেন, বছরজুড়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনে এমনিতেই স্কুলের মাঠ বেহাল থাকত। শিক্ষার্থীরা খুব একটা খেলাধুলা করতে পারত না। শুষ্ক মৌসুমে মাঠের ধুলাবালুতে শ্রেণিকক্ষে টেকা দায় হয়ে পড়ত। এসব কারণে মাঠটি সংস্কারের পর সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং ধুলাবালু বন্ধে ঘাস লাগানো হয়। মাঠে লাগানো ঘাস যাতে গরু ছাগল নষ্ট করতে না পারে, এ জন্য চারদিকে সাময়িক বেড়া দেওয়া হয়েছে। আর দু–এক মাস পর সবুজ ঘাসে মাঠ ভরে উঠবে। শিক্ষার্থীরাই এর সুফল ভোগ করবে। 

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, খেলাধুলা বন্ধ রেখে ঘাস সংরক্ষণের নামে মাঠে বেড়া তুলে কয়েক মাস ধরে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে করে তাদের খেলাধুলা প্রায় বন্ধ। মাঠে খেলাধুলার অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে তারা বারবার দাবি জানিয়েছে, কিন্তু ফল মেলেনি। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্কুল টিফিনে নিম্নমানের নাশতা পরিবেশন, শ্রেণিকক্ষে নষ্ট বৈদ্যুতিক পাখা মেরামত না করা, জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না দেওয়াসহ স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে।

নবম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, এক বছর আগে নবম শ্রেণির বেতন ছিল ৭০ টাকা। এখন প্রায় দ্বিগুণ। অথচ বিদ্যালয়ে ন্যূনতম সুবিধা নেই। বড় বড় শ্রেণিকক্ষে চারটি করে বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও প্রায়ই সময় তা বিকল থাকে। কয়েক দিন ধরে শ্রেণিকক্ষে ফ্যান ঘোরে না। এতে গরমে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

দশম শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, প্রতি মাসে ৭০ টাকা টিফিন ফি নেওয়া হয়। অথচ টিফিন দেওয়া হয় নিম্নমানের। নোংরা ঘিঞ্জি জায়গায় টিফিন তৈরি করা হয়। কোনো দিন ছোট একটি ডালপুরি জোটে, কোনো দিন বেগুনির নামে তেলে ভাজা চালকুমড়া। এ ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষের কারণে তারা এবার জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

পরে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবর তাদের লিখিত অভিযোগ দেয়। 

জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের অভিযোগের কথা জেনেছেন। তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।