বাবা-ছেলে ভিন্ন দলের রাজনীতি করতেই পারেন: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাবা-ছেলে আলাদা রাজনীতি করতেই পারেন। গণতান্ত্রিক দেশে এটা থাকতে পারে। তিনি নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি ও তাঁর বাবা ভিন্নমতের রাজনীতি করলেও তাঁদের মধ্যে কখনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে দেশে ভিন্নমতের রাজনীতি করলে বিপদে পড়তে হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির এক যৌথসভায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, গোটা বাংলাদেশ ও সমাজকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। ভিন্ন দলের রাজনীতি করলে এখন কেউ কারও বাসায় যেতে চায় না, দাওয়াতে যেতে চায় না, চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ও করে মানুষ।

গতকাল বুধবার যশোরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলামের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ছাত্রদলের রাজনীতি করায় ছেলের সঙ্গে পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। কাজী রফিকুল ইসলাম যশোর জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক এবং একই সঙ্গে জেলার কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলার আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

বাবা-ছেলের এ প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে এমন অবস্থা যে ভিন্নমত পোষণ করা যাবে না। গণতান্ত্রিক দেশে এটা থাকতে পারে যে, বাবা একটা রাজনীতি করতে পারেন, ছেলে আরেকটা রাজনীতি করতে পারেন।

বিএনপির নেতা কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, গুমের অভিযোগ তুলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম গণতান্ত্রিক দল আছে যারা এত বেশি ‘সাফার’ করেছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বোধ হয় পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম গণতান্ত্রিক দল আছে যে গণতান্ত্রিক দল এত বেশি কষ্ট ভোগ (সাফার) করেছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য।’ তাঁদের দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে ২৬ লাখকে আসামি করা হয়েছে, এক লাখের ওপরে মামলা, পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী গুম এবং কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ঠিক বুঝি না এটাকে কীভাবে আপনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবেন? কোনো সুযোগ নেই বলার। পৃথিবীর ইতিহাসে কী এমন কোনো গণতান্ত্রিক দেশ আছে যেখানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৫০-৬০ বা ১০০টা মামলা এবং দলের চেয়ারপারসন তাঁর বিরুদ্ধে ৩৬টা মিথ্যা মামলা।’
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করলে এ দেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশে যাতে বিরোধী দল না থাকে, ভিন্নমত না থাকে, বিলীন হয়ে যায়, তারই জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করছেন।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে মাসব্যাপী মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে—১৫ সেপ্টেম্বর মৎস্যজীবী দল, ১৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দল, ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁতি দল, ১৮ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (এইবি), ১৯ সেপ্টেম্বর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), ২০ সেপ্টেম্বর যুবদল, ২১ সেপ্টেম্বর ওলামা দল, ২২ সেপ্টেম্বর মহিলা দল, ২৪ সেপ্টেম্বর কৃষক দল, ২৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক দল, ২৭ সেপ্টেম্বর অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাব) ও ২৮ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দল।

খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুধু মানববন্ধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা তো এই মুহূর্তে বলতে পারব না। এটা মানববন্ধন পর্যায়ে যাবে, এটা ডিউ কোর্সে আন্দোলন তার সুনির্দিষ্ট পথে চলে যাবে।’

গতকাল বুধবার উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ফিরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সচেতনভাবে রাষ্ট্রবিরোধী ভূমিকা পালন করছে। একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়ার মতো একই ধরনের মামলায় সাজা পেয়ে অনেকে জামিনে আছেন কিন্তু তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকেও দলীয়করণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, সেতু ও সড়কমন্ত্রী খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন যে, এখন সড়ক খুব নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু প্রতিদিন অন্তত ১০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের তরফ থেকে সড়কে নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

যৌথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ।