দুর্নীতির ১০ মামলা অনিশ্চয়তায়

দুদক
দুদক

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের মামলা গ্রহণ বা তদন্তের এখতিয়ার থানা-পুলিশের নেই। অথচ চট্টগ্রাম পুলিশ দুই ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ১০টি মামলা ‘ভুলে’ গ্রহণ ও তদন্ত শুরু করে। বিষয়টি আদালতের নজরে এলে তা আবার দুদকের কাছে পাঠানো হয়। এই ১০টি মামলা নিয়ে কী করবে, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ফলে মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

আদালত সূত্র জানায়, দুদকের আইনের মামলা কেবল দুদক কর্মকর্তা করতে পারেন। অথচ দুদককে অন্ধকারে রেখে পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করে। তদন্ত শুরুর পর্যায়ে আসামি রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে, যা পুলিশের এখতিয়ারে পড়ে না। আসামিদের সুবিধা দেওয়ার জন্য পুলিশ এমন কাজ করেছে বলে দুদক আইনজীবীর ভাষ্য।

চট্টগ্রাম দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দুদক আইনের কোনো অপরাধের অভিযোগের মামলা গ্রহণ ও তদন্তের এখতিয়ার থানা-পুলিশের নেই। পুলিশের তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলেও দুদক আইন ও বিধিমালার লঙ্ঘন হওয়ায় আসামিরা সুবিধাই পাবেন। ব্যাংক কিংবা আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারাসহ ২০টি ধারা দুদক আইন ২০০৪–এর অন্তর্ভুক্ত।

দুদক সূত্র জানায়, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ঢাকার গুলশান শাখার তিন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আজিম উল্লাহ, শাহেদ বিন মান্নান ও অনন্ত কুমার খাঁ বাদী হয়ে গত মাসের ৮ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানায় আটটি এবং চকবাজার থানায় দুটিসহ দশটি মামলা করেন। একটি মামলার এজাহারে বলা হয়, ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার গ্রাহক কনা দে-কে তাঁর হিসাবে জমা হওয়া সাড়ে ১৩ লাখ টাকার এফডিআর খুলতে ২০১৬ সালের জুন মাসে অনুরোধ করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. ইফতেখারুল কবির। এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে এফডিআর খুলতে রাজি হন কনা দে। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তা ‘ভুয়া সিল ও সই’ দিয়ে তাঁকে একটি রসিদ দেন এবং কৌশলে একটি চেকে সই করিয়ে নেন। গত ১৮ এপ্রিল কনা দে তাঁর এফডিআরের বিপরীতে কোনো ঋণসুবিধা পাবেন কি না, জানতে ব্যাংকে খোঁজখবর নেন। তখন ব্যাংক থেকে বলা হয়, ওই নামে কোনো এফডিআর নেই। তদন্তে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া চেকের মাধ্যমে ইফতেখারুল টাকাগুলো উত্তোলন করে ফেলেন। এভাবে অনন্যা বড়ুয়া, রুপম বড়ুয়া, সুপ্রভা বড়ুয়া, জেসমিন ইউসুফ, আবু সাঈদসহ ২৫ গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

>


চট্টগ্রামে দুর্নীতির মামলা
‘ভুলক্রমে’ ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ১০ মামলা গ্রহণ ও তদন্ত করে থানা–পুলিশ

মামলায় ইস্টার্ন ব্যাংকের ও আর নিজাম রোড শাখার ব্যবস্থাপক (পরে এই ব্যবস্থাপক) মো. ইফতেখারুল কবির এবং ওই শাখার ব্যাংক কর্মকর্তা সামিউল শাহেদ চৌধুরীসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জাল কাগজের মাধ্যমে গ্রাহক ও ব্যাংকের ৭ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও এবং ও আর নিজাম রোড শাখায় ওই ঘটনা ঘটার কারণে সংশ্লিষ্ট দুটি থানায় মামলা করতে যায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

দুটি মামলার বাদী ইস্টার্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহেদ বিন মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা থানায় মামলা করতে গেছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের আইনের বিষয়ে কিছু জানায়নি।

এ ধরনের মামলা কেন নিলেন জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘ভুলে হয়ে গেছে। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর কাগজপত্র দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেব।’ চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীও জানান একই কথা।

আদালত সূত্র জানায়, মামলাগুলোর অনুলিপি নিয়মানুযায়ী থানা থেকে আদালতে আসার পর পুলিশের ভুলটি উঠে আসে। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান ১৮ আগস্ট এক আদেশে উল্লেখ করেন, ‘ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানা-পুলিশ অভিযোগটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তা ডিবি পুলিশকে তদন্তের জন্য দিয়েছে। যা দুদক আইন ও বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই অবস্থায় দুদককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ ও কাগজপত্র পাঠানোর জন্য থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হলো।’

থানা-পুলিশ দুদককে কাগজপত্র ফেরত দিলেও থানার রেকর্ডে মামলাগুলো রয়েছে। গ্রেপ্তার এক আসামির আইনজীবী জাফর ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, দুদিকে ঝুলে থাকায় আসামির জন্য আইনি কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।

দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, আদালত নির্দেশ দেওয়ার পর পুলিশ অভিযোগটি দুদককে ফেরত দেয়। থানায় রেকর্ড হওয়ায় করণীয় জানতে দুদক প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও কিছু জানানো হয়নি।