এখনো বিএনপির দিকেই তাকিয়ে ছাত্রদলের প্রার্থীরা

কাউন্সিল হওয়ার এক দিন আগে হঠাৎ করেই আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়ে ছাত্রদলে নির্বাচনের জন্য প্রার্থীরা অবাক হয়েছেন। সবাই অপেক্ষা করছিলেন ২৭ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে দলের কমিটি গঠিত হবে। স্থগিতাদেশের পর এখন ছাত্রদলের নেতাদের নজর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে। যদিও ছাত্রদলের কাউন্সিল ঘিরে বিএনপির ‘হস্তক্ষেপ’কে দায়ী করেই আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন সংগঠনটির সাবেক এক নেতা।

আগামীকাল ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। বিএনপির সহযোগী এই সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এবার নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সভাপতি পদে ৯ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎই আদালতের আদেশে প্রার্থীরা চিন্তিত। দলের মতো তাঁরাও মনে করছেন এখানে সরকারের ইন্ধন রয়েছে।

ছাত্রদলের আগের কমিটিতে ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছিলেন আমান উল্লাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। শুনানি নিয়ে আদালত ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। একই সঙ্গে ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। বিএনপির মহাসচিবসহ ১০ জন বিএনপি নেতাকে জবাব দিতে বলা হয়।

সভাপতি পদের প্রার্থী এরশাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুবই আশাবাদী ছিলাম যে ছাত্র রাজনীতিতেও গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। ছাত্রদলের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিক তৈরি হবে সে ব্যাপারে আমরা আশাবাদী ছিলাম। আমাদের নির্বাচনটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হলে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোতেও প্রভাব পড়বে। কিন্তু বিষয়টা খুবই দুঃখজনক যে সরকার অবৈধভাবে আদালতের আশ্রয় নিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে। আইনিভাবে এর মোকাবিলা করা হবে।’

আমান উল্লাহকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না জানিয়ে এরশাদ দাবি করেন, ‘আমান উল্লাহ সরকারের এজেন্সির হয়ে কাজ করছেন অথবা তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে। একদম শেষ মুহূর্তে এটা করা হয়েছে, যাতে সঙ্গে সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে যাওয়া না যায়। যে প্রক্রিয়ায় আদেশ এসেছে, তা সরকারের অপকৌশল ছাড়া আর কিছু না।’ সরকারের ‘চক্রান্ত’ কেন মনে করা হচ্ছে? জানতে চাইলে এই প্রার্থী বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা থামিয়ে দেওয়ার জন্য বা নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার চেষ্টা করছে। তবে তিনি হতাশ হতে চান না। কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন। দ্রুতই এটার সমাধান করা হবে বলে আশা করছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান প্রথম আলোকে জানান, আজ শুক্রবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ  ও ছাত্রদলের কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত নেতারা বৈঠকে বসছেন। সেখানে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এ বছরের জুনে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে পরবর্তী কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণ করা হয়। সেখানে নতুন কমিটিতে জায়গা পেতে বয়সসীমা উল্লেখ করে দেওয়া হলে বিএনপির নয়াপল্টন অফিসে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা মারামারি, ককটেল নিক্ষেপ, অবস্থান কর্মসূচিসহ নানান ঘটনা ঘটান। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দফায় দফায় পরিস্থিতি মীমাংসা করার চেষ্টা করে। অবশেষে সার্চ কমিটি গঠন হয় এবং পরবর্তীতে কাউন্সিলের জন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।

আমান উল্লাহর মামলায় বলা হয়, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদল সহযোগী সংগঠন হওয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এখানে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপের আইনি সুযোগ নেই। কিন্তু এবারের কাউন্সিলের জন্য দল থেকে একটি সার্চ কমিটি ও পরবর্তীতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এ ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্রদলের সাবেক অভিভাবক হিসেবে তাঁদের এখতিয়ার রয়েছে। ছাত্রলীগের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সংগঠনের কমিটি গঠন থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এই ছাত্রনেতার অভিযোগ, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল যারা ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, তারা জড়িত থাকতে পারে এবং সরকার এখানে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাউন্সিল ঘিরে উৎসবমুখর অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সবাই হতাশ হলেও আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।’

সভাপতি পদের আরেক প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন সিনিয়র নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছি যে তাঁরা কোন প্রক্রিয়ায় যাবেন। তাঁদের বৈঠকের পর কোন নির্দেশনা আসবে। আমরা বিশ্বাস করি কাউন্সিল দ্রুত সময়েই হবে এবং সরকার বাধা দেবে না।’ কাজী রওনকুল বলেন, দলে সব সময়ই কিছু বিক্ষুব্ধ লোক থাকে। আমানকে সরকার ব্যবহার করেছে। বিএনপির কেন্দ্র থেকে কাউন্সিলে পরিচালনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘কাউন্সিলের পর ছাত্রদলের একটি চূড়ান্ত গঠনতন্ত্র করার কথা ছিল, যাতে পরবর্তী সময়ে ঝামেলা না হয়। বিএনপি আমাদের কমিটি করে দিচ্ছে না। তারা অভিভাবক হিসেবে সাহায্য করছে।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের জন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমাদের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। দীর্ঘ প্রায় চার মাস ধরে আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাউন্সিল করতে যাচ্ছিলাম, তা সরকার বানচাল করে দিল। পিক অ্যান্ড চুজের মাধ্যমে যাতে অছাত্ররা কমিটিতে না আসে, সে জন্যই এবার কাউন্সিলের জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটা ধারাবাহিক চর্চার মধ্যে চলে আসে। কিন্তু সরকার তা হতে দিতে চায় না।’ তিনি আরও জানান, এটা আইনির পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়।