খুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন ঘিরে শিক্ষার্থীদের ভিড়

খুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন ঘিরে উৎসুক শিশুদের ভিড়। রাজশাহী, ১৩ সেপ্টেম্বর। ছ‌বি: শহীদুল ইসলাম
খুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন ঘিরে উৎসুক শিশুদের ভিড়। রাজশাহী, ১৩ সেপ্টেম্বর। ছ‌বি: শহীদুল ইসলাম

উদ্বোধনের আগেই শুরু হয়ে গেছে উৎসব। যত সব উদ্ভাবনী প্রজেক্ট ঘিরে খুদে বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীদের ভিড়। এরই মধ্যে ঘোষণা এল, এক্ষুনি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তখনো পলাশগাছের আড়ালে দুজন মা দুই বাচ্চার মুখে সকালের নাশতা গুঁজে দিতে ব্যস্ত। খাবার মুখে পুরেই দৌড় দিল দুজন। এমনই হুলুস্থুল আর উত্তেজনায় ভরপুর ছিল বিজ্ঞানচিন্তা-বিকাশ বিজ্ঞান উৎসবের রাজশাহী অঞ্চলের পর্ব।

রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে শুক্রবার জমে উঠেছিল এই উৎসব। বিজ্ঞান সাময়িকী বিজ্ঞানচিন্তা ও দেশের সবচেয়ে বড় মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করেছে। সহযোগিতায় ছিল রাজশাহী বন্ধুসভা। খুদে বিজ্ঞানীদের ৫৩টি উদ্ভাবনী প্রজেক্ট ঘিরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকেরাও। ফলে খুদে বিজ্ঞানীদের এই উৎসব আর ছোট থাকেনি।

নয়টায় জাতীয় পতাকা ও বেলুন উড়িয়ে অতিথিরা উৎসবের উদ্বোধন করেন। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. হবিবুর রহমান জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উৎসবে বিজ্ঞানচিন্তার পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। এ সময় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইকবাল মতিন, বিকাশের হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মশিহুর রহমান, দেশসেরা শিক্ষক রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিতাই কুমার সাহা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ শাহীন সালেহউদ্দিন, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার, সহসম্পাদক আবদুল গাফফার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অতিথিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বিজয়ীরা। রাজশাহী, ১৩ সেপ্টেম্বর। ছ‌বি: শহীদুল ইসলাম
অতিথিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বিজয়ীরা। রাজশাহী, ১৩ সেপ্টেম্বর। ছ‌বি: শহীদুল ইসলাম

অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, প্রথম আলো বরাবরই একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিকাশ এবার এই বিজ্ঞান উৎসবে সহযোগিতা করেছে। এ জন্য তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে বিকাশকেও সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক হোক আর অনানুষ্ঠানিকভাবে হোক, সবাইকে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠতে হবে এবং ২০৪১ সালে যে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, তার কান্ডারি হবে আজকের এই উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা।

বিকাশ কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে এই বিজ্ঞান উৎসবের আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকে আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখার চেষ্টা করি। এটা তারই অংশ।’ তিনি বলেন, বিজ্ঞান শুধু পড়লে হবে না। এটাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে। মানবকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার কাজে বিকাশ সব সময় পাশে থাকবে।

অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, কৌতূহল থেকে বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে। বিজ্ঞানের গোড়ার কথা বলতে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এই তোমাদের পায়ে সুন্দর সুন্দর জুতা, সেটিও বিজ্ঞানের অবদান। চন্দ্রাভিযানের সময় যে জুতার নকশা করা হয়েছিল, আজ সেই জুতাই তোমাদের পায়ে। আজ বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তোমাদের আরও বেশি বেশি বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে।’

উৎসবে ২০ মিনিটের কুইজ পরীক্ষা শেষে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর রাজশাহী বন্ধুসভার সভাপতি ফারুক হোসেন ও সদস্য তথাপি আজাদ। শুরুতেই সাকিব ও তার দলের নৃত্য। নিজেদের আবিষ্কৃত ‘ইলেকট্রিক রেসিং কার’ নিয়ে জাপানের একটি প্রতিযোগিতা থেকে ফেরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) দুই শিক্ষার্থী সুজন ও লিমন তুলে ধরেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। এরপর শুরু হয় খুদে বিজ্ঞানীদের বড় বড় প্রশ্ন। ব্ল্যাকহোল আছে তো, হোয়াইটহোল কি নেই? ব্ল্যাকহোলের ছবি কীভাবে তোলা হয়েছিল, ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে কি রোবট রক্তকণিকা তৈরি করতে পারবে—আরও কত প্রশ্ন। সময়ের অভাবে সব উত্তর দেওয়া যায়নি। কাগজে লিখে নেওয়া হয়েছে। উত্তর দিয়েছেন উৎসবে আসা অতিথিরাই।

এক শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। রাজশাহী, ১৩ সেপ্টেম্বর। ছ‌বি: শহীদুল ইসলাম
এক শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। রাজশাহী, ১৩ সেপ্টেম্বর। ছ‌বি: শহীদুল ইসলাম

উৎসবে অংশ নেওয়া প্রজেক্টগুলো ছিল মজার ও বৈচিত্র্যে ভরা। রাস্তা সম্প্রসারণ হবে, কিন্তু গাছ কাটা লাগবে না, বাক্‌প্রতিবন্ধীর ইশারা ভাষায় কথা বলবে যন্ত্র, তার আবার ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেবে। রাস্তায় গাড়ি উঠলেই পুলিশ জানতে পারবে গাড়ির লাইসেন্স আছে কি না ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে পুরস্কার ঘোষণা করেন বিজ্ঞান উৎসবের একাডেমিক দলের সদস্য উচ্ছ্বাস তৌসিফ ও আহমাদ মুদ্দাসসের। প্রজেক্ট প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ সাআদ বিন হায়াত, মাসফি জুনায়েত ও সুলতানা সারওয়াতারা। মাধ্যমিকে কুইজে প্রথম হয়েছে রাজশাহী গভ. মডেল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী এস এম রুবায়েত ফেরদৌস ও নিম্নমাধ্যমিকে গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের সাম-উন-মুহিব্বু।