নতুন রূপে আসছে সিলেটের কেদ্রীয় শহীদ মিনার

স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরীর নকশায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুনর্বিন্যাস।  প্রথম আলো
স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরীর নকশায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুনর্বিন্যাস। প্রথম আলো

সবুজ টিলাভূমি। তাতে সাদা স্মারকস্তম্ভে লাল সূর্য। ‘চেতনায় আন্দোলিত ভূমি থেকে জেগে ওঠা বাঙালির আবহমান সংগ্রামী ঐতিহ্য’—এই বিষয়বস্তুর স্থাপত্য। এতেই নজর কাড়ে সবার। সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটির দৃষ্টিনন্দন রূপ এবার পূর্ণতা পাচ্ছে সিটি করপোরেশনের আরেক উদ্যোগে। এক পাশে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানকে একীভূত করে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। শহীদ মিনারের স্থপতির মাধ্যমে পরিসর বাড়ানোয় নতুন নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন নকশায় শহীদ মিনারটি আরও দৃষ্টিনন্দন হবে বলে জানিয়েছেন নগরপরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিরা।

সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ৩৩ শতক জায়গাজুড়ে শহীদ মিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। ভাষাশহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনারটি ছিল ৮ শতক জায়গায়। এক পাশে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধযুদ্ধের সময় সদর হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে কর্তব্যরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমদসহ তাঁর সহকর্মীদের কবরস্থান। শহীদ মিনার ও কবরস্থান আলাদাভাবে ছিল। ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একটি মিছিল থেকে ভাঙচুর হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এরপর নতুন রূপে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। 

তখন শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানকে একীভূত করে শহীদ মিনারের বর্তমান পুনর্বিন্যাসের নকশাও করেছেন শুভজিৎ চৌধুরী। নতুন নকশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদল স্থপতিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কাজটি করেছেন। নতুন নকশায় শহীদ মিনার আরও দৃষ্টিনন্দন হবে বলে তিনি মনে করছেন।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ২০১৪ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্যোগে সিলেট সিটি করপোরেশন তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এ শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণ করে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এটিকে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার বলে মন্তব্য করেছিলেন।

পাঁচ বছরের মাথায় শহীদ মিনার পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ সম্পর্কে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ মিনারের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী কবরস্থান যুক্ত করার মধ্য দিয়ে পরিসর বাড়বে। সম্প্রতি শহীদ মিনারের সামনের সড়ক জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা বড় করার কাজের সঙ্গে শহীদ মিনারের বিষয়টি ভাবনায় আছে। এ ভাবনা নিয়ে শহীদ মিনারের স্থপতির সঙ্গে কথা হয়। স্থপতি এ কাজের মধ্য দিয়ে শহীদ মিনার আরও দৃষ্টিনন্দন হবে বলে মতামত দেওয়ায় পরবর্তী সময়ে নকশায় পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, নতুন আঙ্গিকে সাজানোর পর নগরবাসীর কাছে শহীদ মিনারটি আরও দৃষ্টিনন্দন হবে।

স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে একমত নগরপরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি সুব্রত দাশ। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী কবরস্থান চত্বর সাধারণ মানুষের জন্য একটি উন্মুক্ত এবং সহজগম্য স্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে নতুন নকশায়। সেখানকার কবরস্থানটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সহজগম্যতা এবং সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে নাগরিক পরিসরে সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির একটি প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে নতুন নকশাটি শহীদ মিনারের সামনে সাঁটিয়ে রাখা হয়েছে। জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক বর্ধিতকরণের কাজ শেষে শহীদ মিনারের কাজ শুরু এবং দ্রুতই শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর।