সুফলের 'ফল' নিয়ে সংশয়

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ প্রকল্পটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও প্রকল্প এলাকায় বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয় বর্ধক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে বন ও রক্ষিত এলাকা সংলগ্ন ৬০০টি গ্রামের ৪০ হাজার বন-নির্ভর পরিবারের উন্নয়ন করা হবে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় চলে গেলেও এখন পর্যন্ত ৬০০ গ্রামই নির্বাচন করা হয়নি। তবে গাড়ি কেনা কাটা, পরামর্শক নিয়োগ—এসব হয়েছে।

এই অবস্থায় এই প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুফল প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে কমিটি অসন্তোষ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। আগামী বৈঠকে আবারও এ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হবে।

আজ বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রকল্পে বেসিক প্রশিক্ষণের জন্য ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু কিসের ওপর, কাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, প্রশিক্ষণের মডিউল—এসব এখনো ঠিক হয়নি। ৬০০টি গ্রাম নির্বাচন করার কথা, এখন পর্যন্ত ৪০-৫০টি গ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো চেক লিস্ট নেই, সময় সীমা নেই। কিন্তু গাড়ি কেনা হয়েছে হুলুস্থুল করে। এটি মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। কিন্তু এটির বাস্তবায়ন প্রত্যাশার ধারে কাছেও নেই। পরিকল্পনার দিক থেকে কোনো স্বস্তি চোখে পড়েনি, বাস্তবায়নতো দূরের কথা। তাদের নামটা যত ভালো কাজটা ততটা ভালো নয়। তিনি বলেন, এই প্রকল্পে সার্বক্ষণিক প্রকল্প পরিচালক নেই। মন্ত্রণালয় বলেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে পিইসি পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু কী অভিযোগ, সেটা তদন্ত হয়েছে কি না, তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। কমিটি বৈঠকে বলেছে মন্ত্রণালয় ভালো চলছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প আগামী ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। এটি বাস্তবায়ন করছে বন অধিদপ্তর। প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে। বাকি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।

দেশের ৮টি বিভাগের ২৮টি জেলায় ৫টি বনাঞ্চলে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও প্রকল্প এলাকায় বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয় বর্ধক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে বন ও রক্ষিত এলাকা সংলগ্ন ৬০০টি গ্রামের ৪০ হাজার বন নির্ভর পরিবারের উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া ৫২ হাজার ৭২০ হেক্টর বৃক্ষশূন্য পাহাড়ি ও সমতল বনভূমিতে বনাচ্ছাদন, নতুন জেগে ওঠা চরে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন, ২০টি রক্ষিত এলাকায় ২ হাজার ৫০০হেক্ট বন্যপ্রাণীর আবাস্থল এবং ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর এলাকায় বন্যপ্রাণীর চলাচল পথের উন্নয়ন, ৬টি রক্ষিত বনে রক্ষিত বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন, পাখি শুমারি ও রিং পড়ানোসহ শিকারি পাখি সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জাতীয় বনাঞ্চল ১দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত প্রকল্পে ২ জন উপপ্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, ৫৯ জন পরামর্শকের মধ্যে ৪০ জন নিয়োগ করা হয়েছে। বাকি ১৯ জন বাছাই কাজ চলছে। ৫৭ কোটি টাকার কেনা কাটা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ২২৪ কোটি টাকার ক্রয় পরিকল্পনা আছে। এখন পর্যন্ত ৪টি পিকআপ, ১টি জিপ ও ৫০টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। মোটরসাইকেলগুলো মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫টি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছে। ৪৬৪টি জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে ৯ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে বনায়ন করা হয়েছে এবং ২৭৫ হেক্টর স্ট্রিপ বনায়ন করা হয়েছে।