৩৩টি পরোয়ানা নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি

মো. মশিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
মো. মশিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে ৪৫টি মামলা তাঁর বিরুদ্ধে। ১৮টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ১৫টি মামলায় রয়েছে সাজা পরোয়ানা। এত মামলা সত্ত্বেও দিব্যি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। পণ্য নেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন লাখ লাখ টাকা। মো. মশিউর রহমান নামের এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর এত দিন ধরে তাঁর মুক্তভাবে চলাফেরার বিষয়টি এখন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে বিস্ময়।

গত বুধবার রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। থাকেন রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকার জাল নোট এবং ৬ হাজার মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়। রিমান্ডে এনে দুদিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মশিউরের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় তিনটি এবং বনানী, গুলশান, নিউমার্কেট ও সবুজবাগ থানায় একটি করে মামলা আছে। এর বাইরে ঢাকা সিএমএম কোর্টে ৩০টি, চট্টগ্রাম আদালতে ছয়টি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে দুটি মামলা আছে। এর মধ্যে শুধু শাহবাগ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ১৮টি পরোয়ানা রয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তিন মাসের জন্য বিলাসবহুল অফিস ভাড়া নিতেন মশিউর। চলাচল করতেন দামি গাড়িতে। ব্যবসায়িক সব সভা করতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। লাখ লাখ টাকার পণ্য কেনার ব্যবসায়িক চুক্তি করতেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। আস্থা অর্জন করতে অগ্রিম কিছু টাকাও দিতেন। ব্যবসায়ীরা যখন অগাধ বিশ্বাসে সব পণ্য সরবরাহ করেন, তখনই তিনি শুরু করতেন টালবাহানা। টাকা আজ দিচ্ছেন তো কাল, এমন করে ব্যবসায়ীদের ঘোরাতেন। আর মাস তিনেক পেরোতে না-পেরোতেই লাখ লাখ টাকার পণ্য নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতেন।

১৮টি পরোয়ানা থাকার পরেও মশিউরকে গ্রেপ্তার করতে না পারার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫-৬ মাসে এই ওয়ারেন্টগুলো তাঁদের কাছে এসেছে। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছিলেন। কিন্তু মশিউর এবং তাঁর স্ত্রী প্রতিদিনই তাঁদের মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করায় অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মশিউরের নামে এই থানায় মোট ১৩টি পরোয়ানা আছে। তাঁর বাড়ি এখানে হওয়ায় পরোয়ানাগুলো এখানে এসেছিল। কিন্তু মশিউরের কোনো সন্ধান তাঁরা পাননি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মশিউরকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ নিয়ে আসছেন। তাঁর মামলার সংখ্যা জানার জন্য সারা দেশে বার্তা পাঠানো হয়েছে। মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, এত মামলা থাকার পরেও মশিউর রহমান কীভাবে এত দিন বাইরে ছিলেন, সেটিই এখন তাঁদের কাছে বিস্ময়।