ছাত্রদলের সম্মেলনে স্থগিতাদেশ নিয়ে বিএনপিতে বিভ্রান্তি

ছাত্রদলের সম্মেলনের ওপর আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে সম্মেলনের তারিখও গতকাল শনিবার পেরিয়ে গেছে। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।

সম্মেলন প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক আমান উল্লাহর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালত সম্মেলনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এমন খবর ছড়ানোর পর ছাত্রদলের সম্মেলনের কার্যক্রম থেমে যায়। এর পরদিন শুক্রবা​র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে সকলের অগোচরেই আদালতের এই স্থগিতাদেশ এসেছে। এখানে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপ আছে।’

এ বিষয়ে শুক্রবার রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দলের আইনজীবী ও সম্মেলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের বৈঠক হয়। ছাত্রদল সম্মেলন পরিচালনায় গঠিত আপিল কমিটির প্রধান শামসুজ্জামান গতকাল শনিবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, স্থগিতাদেশের বিষয়টি ফয়সা​লা হওয়ার পর ছাত্রদলের সম্মেলন হবে।

এর মধ্যে বিএনপির নেতারা আদালতে আবেদনকারী আমান উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাননি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

এরই মধ্যে গতকাল রাতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের সম্মেলনের ওপর আদালত স্থগিতাদেশ দেননি। আদালত ছাত্রদলের সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিবসহ দলের ১০ জনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এই ১০ জনের সম্পৃক্ততা কেন অবৈধ হবে না, সে ব্যাপারে কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালত।

কায়সার কামাল বলেন, এই ১০ জনকে নোটিশের​ বিষয়ে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এখনই উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

এই অবস্থায় ছাত্রদলের সম্মেলন স্থগিত হলো কিসের ভিত্তিতে— জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার টেলিভিশনের স্ক্রল ও গণমাধ্যমের খবর দেখে জেনেছি যে ছাত্রদলের সম্মেলনের ওপর আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আমরা তখন পর্যন্ত আদেশের কপি হাতে পাইনি।’

>

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক বলেন, সম্মেলনে স্থগিতাদেশ নেই। বিএনপির ১০ নেতার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালত।

তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, সম্মেলনের প্রস্তুতির শেষ সময়ে এসে আদালতে আবেদন, এরপর আবেদনকারীকে খুঁজে না পাওয়া এবং আদালতের আদেশের পেছনে সরকারের দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। সম্মেলনের আয়োজনসংশ্লিষ্ট একাধিক নেতার দাবি, ভোটাভুটিতে ছাত্রদল শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করুক, তা সরকারের কাম্য নয়। তাই সম্মেলন ঝুলিয়ে রাখতে সরকার এই কৌশল নিয়েছে।

সাধারণত নিম্ন আদালতে মামলার আরজি লেখা হয় বাংলায়। কিন্তু আমান উল্লাহর আরজিটি ইংরেজিতে এবং সুলিখিত। তাতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) উল্লেখ করা হয়। এ নিয়েও বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ভাবাচ্ছে।

আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে নিজেদের অঙ্গসংগঠন রাখতে পারবে না। ছাত্রদল এখন বি​এনপির সহযোগী সংগঠন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এবার সংগঠ​নটির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন পরিচালনা করছেন, যা আরপিওর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন চাইলে সংশ্লিষ্ট দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

বিএন​পির প্রচার সম্পাদক এবং ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের আদেশে আমাদের একটা চক্রান্তে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আইনজীবীদের দায়িত্ব দিয়েছি। তাঁরা সবকিছু বিশ্লেষণ করে একটা বক্তব্য দেবেন। সেটা পাওয়ার পর আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেব।’