ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ছাত্রাবাস অরক্ষিত, জরাজীর্ণ

ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ছাত্রাবাসের পরিত্যক্ত শৌচাগার। জরাজীর্ণ স্থাপনাটি চলে গেছে বখাটেদের দখলে।  ছবি: প্রথম আলো
ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ছাত্রাবাসের পরিত্যক্ত শৌচাগার। জরাজীর্ণ স্থাপনাটি চলে গেছে বখাটেদের দখলে। ছবি: প্রথম আলো

অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্রাবাস। পাঁচ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত এ ছাত্রাবাসে দিন–রাত সব সময় চলে বহিরাগতদের আনাগোনা এবং বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডা। স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে পুলিশের সহায়তায় পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও কয়েক দিন যেতে না যেতেই আবার আগের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহসিনা খাতুন বলছেন, বর্তমানে হোস্টেলে কোনো ছাত্র থাকে না। তাই কোনো বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ না দেওয়ায় হল প্রাঙ্গণ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। লোকবল–সংকটের কারণে নিরাপত্তার জন্যও আলাদা কাউকে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয় না।

হোস্টেলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক মোহসিনা খাতুন। তিনি বলেন, নতুন করে অর্থ বরাদ্দ না আসায় ভবন সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ সম্ভব হচ্ছে না। সীমানাপ্রাচীর উঁচু করার জন্য তিনি গণপূর্ত বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ময়মনসিংহ অঞ্চলের শিক্ষাবিস্তারে স্থাপিত হয় ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। সূচনালগ্ন থেকেই স্কুল ক্যাম্পাস থেকে ২০০ গজ দূরে পৃথকভাবে আবাসিক হল চালু থাকায় দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে পড়ালেখা করতে পারত। বর্তমানেও পড়াশোনা ও অন্য সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ভালো থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভবনগুলো পুরোনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ছাত্ররা কেউ থাকতে আগ্রহী হচ্ছে না। নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন আর কোনো শিক্ষার্থী এখানে আসন বরাদ্দের জন্য আবেদন করে না।

সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও জরাজীর্ণ মূল ছাত্রাবাস ভবন।
সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও জরাজীর্ণ মূল ছাত্রাবাস ভবন।

হোস্টেলের মাঝখানে খেলাধুলা করার জন্য একটি বিশাল মাঠ রয়েছে। মাঠের চারপাশ মিলে ৩টি পাকা ভবন ও ২টি আধা পাকা ভবন রয়েছে। ছাত্রদের থাকার জন্য সব মিলিয়ে মোট ১৭টি কক্ষ রয়েছে ভবনগুলোতে। সেখানে ৫০ জন ছাত্রের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া পৃথক ভবনে ডাইনিং হল, নামাজকক্ষ, কমন রুম, অফিস রুম, অতিথিকক্ষ, হল সুপারের বাসভবন এবং বাবুর্চিদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর হোস্টেলের পশ্চিম পাশে পাকা ঘাটসহ একটি পুকুর রয়েছে।

জিলা স্কুল বোর্ডিং বলে পরিচিত এই হোস্টেলে গতকাল শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আবাসিক হল প্রাঙ্গণে কোনো কড়াকড়ি নেই। যে কেউ ঢুকতে পারছে। একদল কিশোর আধা পাকা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। তার পাশেই পুকুরঘাটে কয়েকজন তরুণ বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাঁরাও কিছুক্ষণ পরপর সিগারেট ফুঁকছেন। পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা স্থানীয় বলেই পরিচয় দেন এবং এখানে এসে নিয়মিতই আড্ডা দেন বলে জানান। এ ছাড়া আরও কয়েকজন বহিরাগত হল প্রাঙ্গণের ভেতরে আনাগোনা করছিলেন। আরও দুই-তিনজনকে দেখা গেছে গাছের ঝরা পাতা ও খড়ি কুড়াতে।

গেটে কোনো নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় যে কেউ অনায়াসে এখানে ঢুকতে পারে। মাঝেমধ্যে এখানে কিশোর-তরুণদের মধ্যে ঝগড়া–বিবাদ লাগে। তখন পুলিশ এসে মীমাংসা করে বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও সীমানাপ্রাচীর টপকে বখাটেরা হলের ভেতরে ঢোকে আজেবাজে কাজে লিপ্ত হয়।

ছাত্রাবাসের পুকুরটি ভরে গেছে কচুরিপানায়। ভেঙে গেছে ঘাট।
ছাত্রাবাসের পুকুরটি ভরে গেছে কচুরিপানায়। ভেঙে গেছে ঘাট।

শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই আবাসিক হলের এই বাজে পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, এভাবে অরক্ষিত থাকার ফলে স্থানীয় কিশোর-তরুণেরা মাদকাসক্ত হচ্ছেন এবং উচ্ছৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হচ্ছেন। স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান, এনামুল হকসহ আরও কয়েকজন তাঁদের ভালোবাসার প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অবিলম্বে আবাসিক হল পুনর্নির্মাণ করে ছাত্রদের থাকার উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে হোস্টেল সুপার আজহারুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে এই হলে কোনো শিক্ষার্থী থাকে না। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি একটি ভবনের দোতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তাঁর দাবি, নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তিনি সব সময়ই সচেতন থাকেন। তিনি নিজে বেশ কয়েকবার বখাটেদের নিষেধ করেছেন। কিন্তু তিনি একা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ও রাতে মাদকসেবীদের আড্ডা বন্ধে তিনি একাধিকবার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।