মসজিদের নাম এরোপ্লেন

শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণিতে এরোপ্লেন মসজিদ। ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণিতে এরোপ্লেন মসজিদ। ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

এলিফ্যান্ট রোডের সবাই একনামে চেনে—এরোপ্লেন মসজিদ। শুধু এলিফ্যান্ট রোডের লোকজন কেন, ঢাকার পুরোনো বাসিন্দারাও চেনে এই মসজিদ। মসজিদটির নাম সবার মুখে মুখে থাকার কারণ এর ব্যতিক্রর্মী স্থাপত্যশৈলী। পাঁচতলাবিশিষ্ট মসজিদ ভবনের ছাদে রয়েছে একটি উড়োজাহাজের মডেল। এটি ষাটের দশকের মসজিদ। সে সময় ঢাকায় এমন ভবন একেবারেই নতুন।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মো. ইসমাইল। ১৯৮১ সালে তিনি মারা যান। আজ রোববার কথা হলো মো. ইসমাইলের ছোট ছেলে এস এম আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁর দাদা মো. ইব্রাহিম ছিলেন ঢাকার নবাবদের স্টেটের মুনশি। সে সুবাদে নীলক্ষেত ও লালমাটিয়া এলাকায় তিনি আনুমানিক দুই হাজার বিঘা জমির মালিকানা পান। বাবার মৃত্যুর পর ইসমাইল নিজেদের প্রায় ৯ কাঠা জমির ওপর ১৯৬০ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। আনিসুর রহমান বললেন, ‘শুরুর দু–তিন বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন মসজিদটি ছিল একতলা। একতলার ছাদের ওপর স্থাপন করা হয় উড়োজাহাজের আদলের একটি মডেল।’

এরোপ্লেন মসজিদের পাঁচতলা ভবনের ছাদে উড়োজাহাজের মডেল। এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
এরোপ্লেন মসজিদের পাঁচতলা ভবনের ছাদে উড়োজাহাজের মডেল। এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

স্বাধীনতার পর ভবনটি দোতলা করা হয়। যতবার ভবনের উচ্চতা বেড়েছে, ততবার উড়োজাহাজের মডেলটিকেও ওপরে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এটি পাঁচতলা ভবন। ভবনের মিনারের চূড়ায় ৬০ বছরের পুরোনো সেই উড়োজাহাজটি স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭৯ সালে মসজিদটি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০২ সালে চালু হয় আবাসিক মাদ্রাসা।

সময় বদলেছে, মসজিদ বড় হয়েছে, বদলেছে সড়কের নামও। সড়কটির বর্তমান নাম শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণি। কিন্তু মসজিদটির ছাদে এখনো আছে সেই ‘এরোপ্লেন’টি। মসজিদেই কথা হলো মসজিদের সহকারী ইমাম সৈয়দ মো. বাকি বিল্লাহর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ঢাকায় এমন মসজিদ আর পাবেন না। মানুষ মসজিদটি দেখতে আসেন, নামাজ পড়েন—ভালো লাগে।’ তিনি জানালেন, মসজিদে বর্তমানে একজন খতিব, তিনজন ইমাম, একজন মোয়াজ্জিন, দুজন শিক্ষক, তিনজন খাদেম, দুজন প্রহরী এবং ৩০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন প্রয়াত মো. ইসমাইলের পরিবারের সদস্যরা। মসজিদের অধীনে কিছু দোকান রয়েছে। দোকানভাড়া ও দানবাক্সে পাওয়া অর্থ দিয়েই প্রধানত মসজিদটি পরিচালিত হয়।

মসজিদের নাম এরোপ্লেন রাখার কারণ কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে এস এম আনিসুর রহমান বললেন, ‘আব্বা মসজিদটিকে একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তখন ছাতা মসজিদ, জাহাজ মসজিদ ইত্যাদি নামে মসজিদ ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন এরোপ্লেন প্রতীকের কারণে মসজিদকে একনামে সবাই চিনুক।’