চট্টগ্রামে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপে রোহিঙ্গা ভোটারদের তথ্য!

রয়টার্স ফাইল ছবি
রয়টার্স ফাইল ছবি

ভোটারদের তথ্য–সংবলিত একটি ল্যাপটপ চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে ২০১৫ সালে খোয়া যায়। ওই ল্যাপটপে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বেশ কিছু তথ্য রয়েছে বলে ধারণা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ল্যাপটপ খোয়া যাওয়া এবং রোহিঙ্গাদের ভোটার করার পেছনে নির্বাচন কার্যালয়ের কারও যোগসাজশ থাকতে পারে বলে দুদকের সন্দেহ। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে দুদকের একটি দল উপস্থিত হয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান করে। পরে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে এই সন্দেহের কথা জানান।

এর আগে গত বুধবার দুদকের একটি দল নির্বাচন কার্যালয়ে যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় লাভলেইনের নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে তারা কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে। রোহিঙ্গারা কীভাবে, কার যোগসাজশে ভোটার হলো, তা তদন্ত করতে মূলত দুদক ওই কার্যালয়ে যায়।

গতকাল নির্বাচন কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন কার্যালয়ে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ (আইপি ৪৩৯১) পাওয়া যাচ্ছে না। এই ল্যাপটপের বিষয়ে কোনো সাধারণ ডায়েরি হয়নি। এ বিষয়ে জেলা কর্মকর্তা কিংবা আঞ্চলিক কর্মকর্তা কোনো তথ্য জানেন না। আমাদের ধারণা, ওই ল্যাপটপে বাঁশখালীর একটি অংশের বেশ কিছু রোহিঙ্গা ভোটারের তথ্য রয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটার–সংক্রান্ত কাজে ল্যাপটপটি বাঁশখালীতেও ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছাড়া আরও সাতটি ল্যাপটপ মিরসরাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। তবে ওই ল্যাপটপগুলোর বিষয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে তথ্য রয়েছে। কিন্তু একটির বিষয়ে তথ্য নেই বলে দুদক জানায়।

শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কাদের সহায়তায় এনআইডি বা স্মার্ট কার্ড ও পাসপোর্ট পাচ্ছে, এটা অনুসন্ধানের জন্য পাসপোর্ট কার্যালয় এবং নির্বাচন কার্যালয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মচারী, সিটি করপোরেশন এবং জেলা পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছি।’ এমন ৫৪ জনের তথ্য চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিস থেকে দুদককে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শরিফ উদ্দিন।

শুধু চট্টগ্রাম নয়, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ঘটনাগুলোও তদন্ত করছে দুদক।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ভোটার নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা ভোটার হওয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখছে। তারা দুই দফায় এখানে এসে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছে। রোহিঙ্গা ভোটার হওয়া–সংক্রান্ত আমাদের একটি তদন্ত প্রতিবেদনও তারা নিয়ে গেছেন।’

রোহিঙ্গা ভোটার হওয়া ঠেকাতে চট্টগ্রামের নয়টি উপজেলায় বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে এই নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়মমতো কাগজপত্র দিলে আমরা ভোটার করে নিই। এ ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব অনেক বেশি।’ খোয়া যাওয়া ল্যাপটপের বিষয়ে মুনীর হোসাইন খান বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এ ঘটনা ঘটেছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

সম্প্রতি লাকী আকতার নামের এক রোহিঙ্গা নারী জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড তুলতে গেলে সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই নারী রোহিঙ্গা। তাঁর এনআইডি নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে দেখা যাচ্ছিল। এরপর বিষয়টি নিয়ে প্রথমে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন তদন্ত শুরু করে। পরে দুদক একই বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে। এর অংশ হিসেবে দুদক পাসপোর্ট কার্যালয় ও নির্বাচন কার্যালয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।