২০ স্থানে ৩০০ বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত

কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, সড়কের অলিগলিতে বখাটে ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাত বেড়েছে। তাদের হাতে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী। এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শহরের ২০টি স্থানে অন্তত ৩০০ জন বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য তৎপর থাকে। তাদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

অভিযানের প্রথম দিন গত শনিবার শহরের বিমানবন্দর সড়কের কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির সামনে অভিযান চালিয়ে ১৮ জন বখাটে তরুণকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। 

এর সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মানষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, আটক ১৮ জন কিশোর-তরুণের সবাই স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। আর কোনো দিন মেয়েদের উত্ত্যক্ত করবে না—এই শর্তে মুচলেকা নিয়ে ১৮ শিক্ষার্থীকে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, শহরের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০টি স্থানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দাঁড়িয়ে থেকে নারীদের উত্ত্যক্ত করে। নিজেদের লেখাপড়া বাদ দিয়ে তারা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ভ্রমণে আসা পর্যটকেরাও।  

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ ও সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি মহিলা কলেজ, সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পৌর প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয়, কেন্দ্রীয়  ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদ, গোলদীঘির পশ্চিম পাড়ে, বাহারছড়ার বিভিন্ন স্থানে, বৌদ্ধমন্দির, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে, ভোলা বাবুর পেট্রল পাম্পের পূর্বপাশে মইত্যার দোকানে, বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি, কালুর দোকান, পাহাড়তলী রাস্তার মাথায়, কচ্ছপিয়া পুকুরের পাড়ে, টেকপাড়ার বিভিন্ন অলিগলি, পিটি স্কুল গেট, হাশেমিয়া মাদ্রাসা ও সিটি কলেজ গেটে বখাটের দৌরাত্ম্য বেশি। এসব স্থানে জটলা করে সব সময় আড্ডা চলে এসব বখাটেদের।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, বখাটে কিশোরেরা বিদ্যালয়ের ফটকের সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। কেউ কেউ মুঠোফোনে ছাত্রীদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। বখাটেরা দলবেঁধে চলাফেরা করায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। শিক্ষকেরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।  

 একজন অভিভাবক বলেন, তাঁর দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সন্ধ্যার সময় শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার সময় বখাটেরা উত্ত্যক্ত করে। সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।

টেকপাড়ার বার্মিজ মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, শহরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে বখাটের উৎপাত নেই। আগে বখাটেরা ইভটিজিং এবং কিছু ছিঁচকে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন তারা ইয়াবা বিক্রি, পাচার ও সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। 

অভিভাবকদের নিজের সন্তানদের প্রতি খোঁজখবর রাখার অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, স্কুল–কলেজে যাওয়ার নাম দিয়ে সন্তানেরা কোথায় যাচ্ছে—কী করছে তাঁর খোঁজ অভিভাবকদের রাখতে হবে। না হলে আদরের সন্তানেরাও অজান্তে বখাটে হয়ে যেতে পারে ।