ছাত্রলীগের স্লোগানে নতুন 'ভাইদের' নাম

মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ছবি: প্রথম আলো
মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ছবি: প্রথম আলো

এক দিন আগেও তাঁদের দেখলে ‘ভাই’, ‘ভাই’ বলে চারপাশ সরগরম করে তুলতেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। সেই দুই ‘ভাই’ রেজওয়ানুল হক চৌধুরী আর গোলাম রাব্বানী এখন আর পদে নেই। তাঁদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আর কোনো স্লোগান নেই। গতকাল রোববারও ক্যাম্পাসে স্লোগান হয়েছে, শুধু নাম দুটো বদলে গেছে। 

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল ও রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের পরিবর্তে আল নাহিয়ান খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত (আগামী ১০ মাস) তাঁরা এই দায়িত্বে থাকবেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে এই ঘোষণা আসার পর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা খুঁজে পেয়েছেন নতুন ‘ভাই’।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের এই রদবদলে শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়। রাত একটার দিকে টিএসসি এলাকায় যান ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সদ্য সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী। 

নাহিয়ান আগে রেজওয়ানুলের অনুসারী ছিলেন। মাত্র এক দিন আগেও রেজওয়ানুলকে ঘিরেই চলত তাঁর অনুসারীদের সব স্লোগান ও প্রটোকল। কিন্তু শনিবার রাতের চিত্রটি ছিল একদমই ভিন্ন। রেজওয়ানুল নন, প্রটোকলের কেন্দ্রে ছিলেন নাহিয়ান। রেজওয়ানুলের সামনেই ‘জয় (নাহিয়ানের ডাকনাম) ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে টিএসসি এলাকা। একপর্যায়ে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে ‘সবাই ভালো থাকবে’ বলে চলে যান রেজওয়ানুল। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের নেতা–কর্মীদের একটি অংশ রেজওয়ানুল ও রাব্বানীকে ঘিরে আবর্তিত হতো, তাদের চিন্তাতেও এসেছে পরিবর্তন। বিভিন্ন দল–উপদলের বেশির ভাগের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বৃহত্তর ফরিদপুর ও উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীরা। এর কারণ রেজওয়ানুল উত্তরবঙ্গের (কুড়িগ্রাম) আর রাব্বানী বৃহত্তর ফরিদপুরের (মাদারীপুর) ছেলে। 

শনিবার রাতে কয়েকটি হলে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছেন। কারণ, বরিশালের সন্তান আল নাহিয়ান খান ও খুলনার সন্তান লেখক ভট্টাচার্য ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেয়েছেন। নিজেদের অঞ্চলের ‘ভাই’ নেতৃত্বে আসায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিজেদের আগের চেয়ে শক্তিশালী ভাবছেন তাঁরা। আর তা জানান দিতেই ওই মিছিল। 

রেজওয়ানুল ও রাব্বানীকে গতকাল ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী গতকাল ডাকসুর কার্যালয়ে যাননি। 

গতকাল দুপুরে মধুর ক্যানটিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগ কোনো অন্যায়কারী, চাঁদাবাজ বা টেন্ডারবাজকে প্রশ্রয় দেবে না। ছাত্রলীগের কেউ চাঁদাবাজি করলে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবেন। 

আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, লবিং–তদবির নয়, ছাত্রলীগে পরিশ্রমী ও যোগ্য কর্মীদের মূল্যায়ন হবে। 

আজ সোমবার সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত দুই নেতা। 

সেলফি ও প্রটোকল
নেতৃত্বে আসার প্রথম দিনেই গতকাল সেলফি ও প্রটোকলের বিড়ম্বনায় পড়েন আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্য। মধুর ক্যানটিনে তাঁদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ভিড় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা–কর্মীসহ ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন জেলা ইউনিটের ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। অনুরোধেই ঢেঁকি গিলতে হয় নতুন দুই নেতাকে। 

আল নাহিয়ান খান মধুর ক্যানটিন থেকে বের হওয়ার পরও তাঁকে প্রটোকল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার পর্যন্ত চলে আসেন নেতা–কর্মীরা। তিনি নেতা–কর্মীদের চলে যেতে বললেও তাঁরা যাননি। একপর্যায়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁকে। 

রাব্বানীর পদত্যাগ চান নুরুল
অনিয়ম–দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের পদ হারানোর পর রাব্বানী ডাকসুর জিএস পদে থাকার বৈধতাও হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রাব্বানী ছাত্রলীগের পদ হারিয়েছেন। ফলে নৈতিকভাবে তাঁর ডাকসুর পদে থাকার অধিকারও নেই।’ 

রাব্বানীর পদত্যাগের সঙ্গে ডাকসুর মানসম্মান জড়িত উল্লেখ করে নুরুল বলেন, ‘ডাকসুর সভাপতিকেও (বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, সভা ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’