বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে গেছে দেশ: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা বিশ্বের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে গেছে। বর্তমান সরকারকে পুতুল সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ক্রীড়নক এই সরকার।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্বে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে তার মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে গেছে। বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজশ করে বাংলাদেশে জনগণের অধিকার হরণ করছে। প্রকৃতপক্ষে তারা সম্পূর্ণভাবে পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে। যারা বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে কাদের ক্রীড়নক হয়ে সরকার বসে আছে।’

গণতন্ত্র দিবস যখন পালিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের অনেকগুলো দেশেও গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র একটা সংস্কৃতি যার মধ্য দিয়ে মানুষ প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছুকে গড়ে উঠতে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণতন্ত্রের চেতনা নিয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং যে দল নেতৃত্ব দিয়েছিল তারাই প্রথম গণতন্ত্রকে হত্যা করে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সে প্রদেশের মন্ত্রীরা যখন বলে বাংলাদেশে তাদের নাগরিক ফেরত পাঠাবে তখন বাংলাদেশ সরকার কোনো প্রতিবাদ করে না। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, দুঃখজনকভাবে আমার নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না।’ তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঐক্য তৈরি হবে।

ঐক্যফ্রন্টের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়, এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন,‘ কার্যক্রম কোন দিকে দিয়ে নেই? আমরা আমাদের কাজগুলো করছি। আমরা আমাদের দলগুলোকে সংগঠিত করছি। অন্যান্য দলগুলোও নিজেদের কাজগুলো করছে।’ তবে তিনি জানান, অতি দ্রুত তাদের ঐক্য তৈরি হবে এবং ঐক্যফ্রন্ট অটুট আছে কোনো ভাঙন ধরেনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য মুক্ত করতে হলেও তা আন্দোলনের মাধ্যমেই করতে হবে।

অন্যান্য সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের ছোট খাটো সমস্যা বা মতপার্থক্য আছে সেগুলোকে পাশে রেখে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, সবাই এক হই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র দিবস আমরা এমন একটা বাংলাদেশে উদ্‌যাপন করছি যেখানে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার পরপর দুটো পিলে চমকানো নির্বাচন উপহার দিয়েছে। একটাতে বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং আরেকটাতে ভোট হয়েছে আগের রাতে।’
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে আসিফ নজরুল বলেন, মানুষের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলেও একটা হরতাল দেওয়ার সাহস কারও হয়নি। সরকারে প্রতি ভয় থেকে তা হয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সব বিরোধী পক্ষকে পিটিয়েছে। জনগণকে তারা বিশ্বাস করতে পারে না বলে কারচুপির নির্বাচন করতে হয়। যে দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছে সে দলকে তেমনই এক বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

এই অধ্যাপক ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ভারত যখন বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে তারা কেন নিশ্চুপ থাকেন?’ তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের রাজনীতি করেন। দেশের মানুষের স্বার্থ দেখতে হলে সরকারের যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘কি হাস্যকর, একটা দল এত বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা ২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে নির্বাচন হয়েছিল তার ডকুমেন্টেশন করতে তিন বছর সময় নিয়েছিল।’ এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যও সোচ্চার হতে বলেন। তিনি এও বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। একজন শেষ হয়ে গেলে আরেকজনও শেষ হয়ে যাবেন। দুই নেত্রী সমান শক্তিশালী থাকলে জনগণ ভালো থাকে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দুর্নীতির জন্য ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া দুই নেতা ঘুষ চাওয়ায় মামলা কেন হয়নি তাও জানতে চান। তিনি আরও বলেন, ‘পাপ শুধু এই দুই নেতার আর কেউ কিছু করেনি? ’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সারা দুনিয়াতেই এগ্রেসিভ ক্যাপিটালিজম চলছে।’ সে কারণেই বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দুনিয়ার পরাশক্তির কাছে প্রিয়। এ ছাড়া বলেন, বর্তমান অবস্থা তৈরি হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতার কারণে।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিল্পবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার প্রমুখ।