নাওমিদের স্বপ্ন পূরণ হবে কি?

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাওমি রাকশাস। স্বপ্ন দেখে মনিকা চাকমা কিংবা সানজিদার মতো জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলার। শুধু নাওমি নয়, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বরুয়াজানী হাসান উচ্চবিদ্যালয়ের এমন অনেক কিশোরীই স্বপ্ন দেখছে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের সাধ্যের অভাব।

বরুয়াজানী হাসান উচ্চবিদ্যালয়ের মেয়েরা সম্প্রতি ৪৮তম জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ফুটবলের বালিকা বিভাগে দুর্দান্ত খেলে উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে জেলা পর্যায়েও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে তারা। এবার লক্ষ্য বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে নারী ফুটবলার নাওমি-রুমিদের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাওয়ার পথে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে স্থাপিত হয় বরুয়াজানী হাসান উচ্চবিদ্যালয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮০০। তাদের বেশির ভাগই ছাত্রী। এই ছাত্রীরা ফুটবল নিয়ে খুব একটা প্রশিক্ষণ বা সুযোগ-সুবিধা পায় না। তা ছাড়া, রয়েছে পারিবারিক নানা প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু হাজারো প্রতিবন্ধকতা টপকে এগিয়ে চলেছে অদম্য মেয়েরা। দুর্দান্ত খেলে তারা চমকের পর চমক দেখাচ্ছে ফুটবলে।

৪৮তম জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বালিকা বিভাগে উপজেলা পর্যায়ের খেলায় বরুয়াজানী হাসান উচ্চবিদ্যালয় ৪-২ গোলে নালিতাবাড়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়কে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে নয়াবিল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়কে ১-০ গোলে হারিয়ে জেলা পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বরুয়াজানী হাসান উচ্চবিদ্যালয়।

জেলা পর্যায়ের খেলায় শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ১-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে ওঠে বরুয়াজানী হাসান উচ্চবিদ্যালয়ের মেয়েরা। ফাইনালে তারা শ্রীবরদীর একটি বিদ্যালয়কে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হারিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। শুধু তা–ই নয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের বালিকা (অনূর্ধ্ব-১৭) বিভাগে নালিতাবাড়ী উপজেলার পক্ষ থেকে খেলছে বরুয়াজানী হাসান উচ্চবিদ্যালয়ের মেয়েরা। সেখানেও দুর্দান্ত খেলেছে তারা। গত রোববার অনুষ্ঠিত এ খেলায় ঝিনাইগাতী উপজেলা একাদশকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে তারা।

কিন্তু সম্ভাবনাময় এই দলটি দুর্দান্ত খেলা দেখালেও পাচ্ছে না খুব একটা সুবিধা। বিদ্যালয়ের তহবিলে ক্রীড়ার জন্য যে অর্থ ছিল, তা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খেলা চালিয়ে যেতেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার জন্য অর্থ না থাকায় সবাই হতাশ হয়ে পড়েছে। মেয়েদের খেলার জন্য বুট কেনার টাকা বিভিন্নজনের কাছ থেকে জোগাড় করা গেলেও খাবার, যাতায়াতসহ অন্য খরচের টাকা কীভাবে আসবে, সেটাই এখন সবার দুশ্চিন্তা।

আর্থিক সহযোগিতা না পেলে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে কিশোরী ফুটবলাররা। বিদ্যালয়ের নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক রুমি আক্তার জানায়, তারা উপজেলা পর্যায়ে দুটি দলকে হারিয়ে জেলা পর্যায়ে খেলেছে। জেলা পর্যায়ে দুটি দলকে হারিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সুযোগ-সুবিধা পেলে তারা আরও এগিয়ে যেতে পারবে।

দলের কোচ মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নিয়মিত প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সুবিধা নেই। যেমন পুষ্টিকর খাবার, যাতায়াত খরচ, ফুটবলের স্বল্পতা ইত্যাদি। এ ছাড়া পারিবারিকভাবেও অধিকাংশ খেলোয়াড় আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তারপরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। খেলোয়াড়েরাও ভীষণ আগ্রহী।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের খেলার খরচ বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে চালানো হয়েছে। রোববার জেলা পর্যায়ের ফাইনালেও ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার টাকা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে। বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে খরচ হবে ১৫-২০ হাজার টাকা। বর্তমানে তাঁদের হাতে কোনো টাকা নেই। ফলে আজ (সোমবার) প্রশিক্ষণ পর্যন্ত করতে পারেনি মেয়েরা।

প্রধান শিক্ষক বলেন, মেয়েরা চমৎকার খেলছে। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। সুযোগ-সুবিধা পেলে তারা জাতীয় দলে খেলতে পারবে। কাল বুধবার বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয়ের আর্থিক সামর্থ্য নেই। উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা পেলে অনেক সুবিধা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, ‘খেলোয়াড়দের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে যা কিছু করণীয় আছে, তা আমরা করব।’