দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাশে ভিটিসিবি

রয়টার্স ফাইল ছবি।
রয়টার্স ফাইল ছবি।

বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সেবা দেয় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর দ্য ব্লাইন্ড (ভিটিসিবি)। জার্মানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সিবিএম ভিটিসিবিকে ২৭ বছর ধরে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে।

ভিটিসিবি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজ শুরু করে ১৯৭৭ সাল থেকে। ভিটিসিবিতে বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষক রয়েছেন। কম্পিউটার ও পিএবিএক্স শাখায় প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রাসেল হাসান। তাঁর অধীনে প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন ১০ জন। তাঁদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুজন নারী রয়েছেন। ‘ব্রেইল আল কোরআন’ শাখায় প্রশিক্ষণার্থী আটজন। তাঁদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চার নারী রয়েছেন।

‘টেইলারিং এবং ড্রেস মেকিং প্রশিক্ষণ’ শাখায় পাঁচজন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী চারজন এবং একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী। কলম ও মোম তৈরি প্রশিক্ষণ শাখায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চার নারী কাজ করেন।

ভিটিসিবিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন জাহানারা বেগম। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করেন। গ্রাম্য চিকিৎসকের পরামর্শে ভালো ফল না পেয়ে শহরে চিকিৎসক দেখাতে আসেন। কিন্তু তত দিনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভিটিসিবি থেকে চকপেনসিল মেকিংয়ের ওপর জাহানারা প্রশিক্ষণ নেন।

ভিটিসিবিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের এক বছর মেয়াদে প্যাকেজিং, বুকবাইন্ডিং, কম্পিউটার অপারেটিং কোর্স ফর দ্য ব্লাইন্ড, টেলিফোন পিএবিএক্স অপারেশন, ক্যান্ডেল মেকিং, টেইলারিং, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হলে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এক বছর মেয়াদি এই কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী মাসে দুই হাজার টাকা সম্মানী এবং প্রশিক্ষণ শেষে পুনর্বাসন ব্যবস্থাসহ পাঁচ হাজার টাকা ও সার্টিফিকেট পান।

প্রশিক্ষণের পরে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, প্যাকেজিং, বুকবাইন্ডিং, মোমের কারখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসহ ফোন ও কম্পিউটার অপারেটর পদে প্রশিক্ষণার্থীদের কাজেরও ব্যবস্থা করে ভিটিসিবি। এ ছাড়া প্রশিক্ষণার্থীরা ইচ্ছে করলে পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলতে পারেন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান।

ভিটিসিবি সাত সদস্যবিশিষ্ট ট্রাস্ট বোর্ডের মাধ্যমে এবং নিজস্ব অর্থ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন চেয়ারম্যান মশিউদ্দিন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

ভিটিসিবিতে কাজ শেখানোর পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থীদের সামাজিকতা ও আচার-আচরণ শেখানো হয়। এতে তাঁদের সঙ্গে অন্যদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। অভিজ্ঞতার ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন।

(নাজিয়া হোসেন: প্রথম আলোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাংবাদিক)