পরীক্ষা ছাড়া ঢাবিতে ভর্তি: ছাত্রলীগের কণ্ঠেও ডিনের সুর

ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু নেতারা আজ সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: প্রথম আলো
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু নেতারা আজ সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: প্রথম আলো

লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে বলে অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম যে দাবি করেছিলেন, তার সঙ্গে সুর মেলালেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু নেতারাও। তাঁদের বক্তব্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থীরা কেবল মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েই সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তব্য জানাতে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু নেতারা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এজিএস সাদ্দাম হোসেন দাবি করে বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা সবাই নিয়ম মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, প্রথা ও রীতি অনুসরণ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। একটি সুনির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনকে দায়ী করে বলা হচ্ছে যে ছাত্রলীগের নেতা বলেই তাঁদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে—এটি ঠিক নয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হিসেবে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হননি, হয়েছেন শিক্ষার্থী হিসেবে। এ প্রক্রিয়ায় শুধু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই নন, ক্রিয়াশীল অপরাপর ছাত্রসংগঠনের (ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও স্বতন্ত্র জোট) নেতা-কর্মীদের অনেকেই ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক যে এ ক্ষেত্রে শুধু একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনকে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন যাঁরা ডাকসু নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, তাঁরাই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন সাদ্দাম হোসেন।

৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হয়ে ডাকসু নেতা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রলীগের ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি হন। নির্বাচন করতে আগ্রহী এই ৩৪ জনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সম্পাদক ও সদস্য পদে নির্বাচনে আটজন অংশ নেন, বিজয়ী হন সাতজন। এ ছাড়া দুটি হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এর মধ্যে একজন নির্বাচিত হন, অন্যজন পরাজিত হন। আরেকজন ছিলেন ছাত্রলীগের ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য।

ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল ওই প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায়। কিন্তু তাঁদের কেউই তাতে অংশ নেননি। ভর্তি হওয়া একাধিক ছাত্র এবং ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা প্রথম আলোর কাছে এ কথা স্বীকার করেছেন।

ওই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে তাঁর অনুষদের চেয়ারম্যানস কমিটির এক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সান্ধ্য কোর্সগুলোতে লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় আর অন্যান্য অনুষদ থেকে পাস করা যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন পেশায় আছেন, তাঁদের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি এ দাবি করেন, সন্ধ্যাকালীন প্রোগ্রামগুলোয় কোনো ধরনের পরিবর্তনের জন্য একাডেমিক কাউন্সিল বা সিন্ডিকেটে যেতে হয় না। শুধু প্রোগ্রামের অনুমতিটি একাডেমিক কাউন্সিল বা সিন্ডিকেট থেকে নিতে হয়।

তবে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একাধিক সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেন, তাঁদের অনুষদে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, পরীক্ষা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যাকালীনসহ কোনো কোর্সেই ভর্তির সুযোগ নেই। কোনো কোর্সে কোনো পরিবর্তন করতে হলে একাডেমিক কাউন্সিল বা সিন্ডিকেট হয়েই আসতে হয়। সব অনুষদের জন্যই এই নিয়ম প্রযোজ্য।

কোন নিয়ম মেনে ছাত্রলীগের ৩৪ জন ভর্তি হয়েছিলেন—জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সুরেই বলেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের চেয়ারম্যানস কমিটির এক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সান্ধ্য কোর্সগুলোতে লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘প্রথা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনের আগে ছাত্রদলের নেতা আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকনও একইভাবে ভর্তি হয়ে ডাকসুর ভিপি ও জিএস হয়েছিলেন। তাঁদের আগে মাহমুদুর রহমান মান্না ও মুশতাক হোসেনও নির্বাচন সামনে রেখে ভর্তি হয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক লিপি আক্তার, সদস্য নিপু ইসলাম প্রমুখ। একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না।

ভিপি নুরুল হক ইতিমধ্যেই জিএস গোলাম রাব্বানীর অপসারণ চেয়ে উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ওই চিঠি নুরুল হকের ব্যক্তিগত। এর বিষয়ে আমরা কেউ জানি না।’ তিনি বলেন, জিএস গোলাম রাব্বানীর বিষয়টি ডাকসুর ফোরামে আলোচনা করে জানাবেন তাঁরা।