রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে জাতিসংঘে

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো ফাইল ছবি
কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে জাতিসংঘে। জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ২৫ বা ২৬ সেপ্টেম্বর এই বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কাজ করতে আগামী মাসে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে সফর করবেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।

বৈঠক সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গা বিষয়ক টাস্কফোর্স যে ১০টি কাজ করতে বলেছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আগে সংসদীয় কমিটি প্রথমে রোহিঙ্গা মাঝিদের (দলনেতা) মিয়ানমার ঘুরিয়ে আনার সুপারিশ করেছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোহিঙ্গা মাঝিদের ঘুরিয়ে আনতে রাজি হয়নি মিয়ানমার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সংসদীয় কমিটি। কমিটি বলেছে, যেভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে তা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চীনের পদক্ষেপ দৃশ্যমান হলেও কোনো কোনো বৃহৎ শক্তি নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সঙ্গে মহড়া করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আলোচনার একপর্যায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) ও আইসিজেতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংসদীয় কমিটি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়।

বৈঠক শেষে ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, সংসদীয় কমিটি বলেছে, যেভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে তা দিয়ে হবে না। আরও শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। মিয়ানমারের দুর্বল জায়গা কম। কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে। মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা সব রকমের পদক্ষেপ নিচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।

ফারুক খান বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী মাসের শেষের দিকে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা দুটি দলে ভাগ হয়ে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো সফর করবেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যাতে সদস্য দেশগুলো ভূমিকা রাখে সে বিষয়ে আলোচনা হবে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ আসিয়ান দেশগুলোর সংসদীয় কমিটি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করবেন।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। এ ছাড়া বিদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, সে জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, আবদুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক, কাজী নাবিল আহমেদ ও নিজাম উদ্দিন জলিল বৈঠকে অংশ নেন।