অর্থ লেনদেনের অভিযোগের তদন্ত চান সবাই

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রলীগের টাকা লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে ছাত্রলীগ ও উপাচার্য পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জ করেছেন। এ ছাড়া মুঠোফোন কথোপকথনের অডিও ছড়িয়ে পড়া এবং ছাত্রলীগের দুই নেতার টাকা নেওয়ার স্বীকারোক্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মহল সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দাবি করেছে।

রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বাদ পড়া সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের অডিওতে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম উপস্থিত থেকে ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে এক কোটি টাকা ভাগ করে দিয়েছেন বলে রাব্বানীকে জানান সাদ্দাম। সেই ভাগ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন সাদ্দাম ও তাঁর অনুসারীরা। পরদিন সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে টাকার ভাগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন সাদ্দাম হোসেন ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হোসেন। এরপর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘কেউ বলছে টাকা পেয়েছে। আবার কেউ অস্বীকার করছে। আসলে কারা টাকা পেয়েছে আর কারা টাকা পায়নি বা টাকা দেওয়া হয়েছে কি না—এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার অবসানের জন্য তদন্ত কমিটি হতে পারে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, উপাচার্য এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত করেছেন। সবাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। আমরা এর অবসানের জন্য সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

তদন্তের স্বার্থে উপাচার্যের অব্যাহতি দাবি
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের স্বার্থে সাময়িকভাবে উপাচার্যের অব্যাহতিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষক মঞ্চ। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক মঞ্চের এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির যে ন্যক্কারজনক ঘটনার অভিযোগ এসেছে, তা লজ্জাজনক। উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনের রহস্যজনক লুকোছাপা এবং একগুঁয়েমির মধ্য দিয়ে ঘটনার শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে টেন্ডার গ্রহণে অনিয়ম এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগ সামনে আসে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও এসেছে। ছাত্রলীগকে কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে, যা একাধিক ছাত্রলীগ নেতা স্বীকারও করেছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রশাসন তদন্তের বিষয়ে টালবাহানা করলেও আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উপাচার্যকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।’

শিক্ষকদের অন্য দাবিগুলো হলো স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে তদন্তের টার্মস অব রেফারেন্স এবং এখতিয়ার জনসমক্ষে প্রকাশ করা, অভিযোগে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের তদন্তের আওতায় আনা ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের মধ্যস্থতায় ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তের দাবিতে প্রায় এক মাস আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ ছাড়া ‘পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা’ ছাড়াই এসব উন্নয়নকাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে বলেও দাবি তাঁদের।

এসব বিষয় নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের দুই দফা দাবি মেনে নিলেও টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে বুধবার পর্যন্ত সময় নেন উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনকারীদের বাকি একটি দাবি নিয়ে বুধবার বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের কাউন্সিল কক্ষে বৈঠক হবে।

এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করার পর এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, টাকা লেনদেন হয়েছে। আমরা আমাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি থেকে সরে আসব না।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘টাকা ভাগাভাগির বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় স্ববিরোধী বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। অথচ যাঁরা টাকার ভাগ পেয়েছেন, তাঁরা তা স্বীকার করেছেন। কিন্তু উপাচার্য তা অস্বীকার করছেন। তাই একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি দ্রুত করতে হবে এবং দোষীদের ফৌজদারি আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’