ছাত্রদলের সম্মেলন করতে 'আড়াল' কৌশল বিএনপির

আদালতের স্থগিতাদেশের পর এবার বিএনপির ভূমিকা আড়াল করে সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে ছাত্রদলে। তবে এর জন্য একটি জুতসই উপায় খোঁজা হচ্ছে, যাতে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে না পারে। এ লক্ষ্যে ছাত্রদলের কাউন্সিলরদের সক্রিয় করা হচ্ছে।

বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচনের বিষয়টি তারা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তাই শিগগিরই অনলাইনে ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের শীর্ষ দুই পদে নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হতে পারে। এ লক্ষ্যে ছাত্রদলের কাউন্সিলরদের একটি বড় অংশ গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভা করেছে। ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সভাপতি খন্দকার এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সারা দেশের ৫৩৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে প্রায় আড়াই শ জন উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী হচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি এখন জেলে। এখন আমরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ছাত্রদলের সব দায়িত্ব অর্পণ করেছি।’

পরে গতকাল রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘উপস্থিত কাউন্সিলররা সর্বসম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের সংশোধন, কাউন্সিল আহ্বান, কাউন্সিল মুলতবি করা, ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্ধারণে নির্বাচন পরিচালনা করাসহ যেকোনো সাংগঠনিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব প্রদান করে।’

১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে ১২ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক আমান উল্লাহর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালত সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিবসহ দলের ১০ জনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। একই সঙ্গে এই ১০ জনের সম্পৃক্ততা কেন অবৈধ হবে না, সে ব্যাপারে কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালত। এরপর ছাত্রদলের সম্মেলনের কার্যক্রম থেমে যায়। 

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে নিজেদের অঙ্গসংগঠন হিসেবে রাখতে পারবে না। ছাত্রদল বিএনপির সহযোগী সংগঠন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন পরিচালনা করছেন, যা আরপিওর লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে। 

অবশ্য বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, আদালত যেসব প্রশ্ন তুলে ছাত্রদলের সম্মেলন অনুষ্ঠানে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, সে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই সম্মেলন করার প্রস্তুতি চলছে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যুত করার ঘটনাটি বিএনপি তাদের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। 

এ বিষয়ে বিএনপির নেতা ও ছাত্রদলের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত আপিল কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙতে পারে, গড়তে পারে, তাহলে বিএনপির দোষ কোথায়? তা ছাড়া ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, তারা বিএনপির চেয়ারপারসনের পরামর্শে এবং সিদ্ধান্তে কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে।’

>ছাত্রদলের বিষয়ে যেকোনো সাংগঠনিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে।

আওয়ামী লীগকে শোকজ দিতে পারবেন?
এদিকে ছাত্রলীগের ঘটনার পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সম্মেলন স্থগিতে আদালতের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যুত করেছেন এবং ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বও দিয়েছেন; যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের লঙ্ঘন। কারণ, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, তারা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। ফলে ছাত্রলীগকে কোনো নির্দেশ দেওয়া বেআইনি বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

গুলশানে জরুরি বৈঠক
আদালতের স্থগিতাদেশের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নেতারা বৈঠক করেন। এই বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠকে ছাত্রদলের কাউন্সিলরদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ছাত্রদল বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক নেতা।